দেবপ্রিয়া
বীরসাভারকরের ওপর থেকেই দেখতে পেয়েছিলাম সমুদ্র। তবে রংটা বুঝতে পারিনি। বিমানের জানলার কাচ ঘষা। তাতে রং বোঝা যায় না।
ঘোরা আমার নেশা। ঘুরি আর ডায়েরিতে লিখে রাখি। এবার আন্দামান ভ্রমণটা ব্যক্তিগত পরিসর ছাড়াল। ভূগোল বইয়ে আন্দামানের ভৌগোলিক অবস্থান মুখস্থ করতে যতটা সময় নিয়েছিলাম তারও কম সময়ে পৌঁছে গেলাম সেখানে। মাত্র দু’ঘণ্টায় কলকাতা থেকে পোর্টব্লেয়ারের বীরসাভারকার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। হোটেলে বাক্স-প্যাঁটরা জিম্মা দিয়ে সোজা নৃতাত্ত্বিক সংগ্রহশালা, জোনাল অ্যানথ্রোপোলজিক্যাল মিউজিয়াম। আন্দামানে একাধিক নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর বাস। তার সবিস্তার পরিচয় মিলবে।
বিকেলে বিখ্যাত সেলুলার জেলে। বিখ্যাত না কুখ্যাত? কত স্বাধীনতা সংগ্রামীর অত্যাচারিত হওয়ার সাক্ষী এই জেল। বীর বিনায়ক দামোদর সাভারকার, উল্লাসকর দত্ত, মহাবীর সিংয়েরা অমানুষিক অত্যাচার সহ্য করেছেন এখানেই। এই জেলই আন্দামানকে ‘কালাপানি’ হিসাবে পরিচিত করে মানুষের মনের বিভীষিকার কারণ ছিল। তিনটি তলা বাড়িটির প্রত্যেক তলায় অসংখ্য ছোট ছোট কুঠুরি। যেখানে সূর্যালোকের প্রবেশ নিষিদ্ধ। এই কুঠুরিতে বন্দি রেখেই বিপ্লবীদের মন থেকে স্বাধীনতার স্বপ্ন মুছিয়ে দেওয়ার প্রবল প্রচেষ্টা চালাত ইংরেজরা। একসঙ্গে প্রায় ৭০০ কয়েদি রাখার ব্যবস্থা ছিল। তিনতলার একদম প্রান্তের কুঠুরিটিই ছিল বীর সাভারকারের। জেলের এক প্রান্তে ফাঁসিঘর। এখানে তিনজনকে একসঙ্গে ফাঁসি দেওয়া হতো।
বিভীষিকার সাক্ষী এই জেলের সেন্ট্রাল টাওয়ার থেকে অভাবনীয় দৃশ্য দেখা যায়। নীল বঙ্গোপসাগর ও তার বুকে জেগে থাকা ছোট ছোট দ্বীপমালার সৌন্দর্য বর্ণনা করা যায় না।
সন্ধ্যেবেলা এখানেই দেখলাম লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো। তাতে আন্দামানের ইতিহাস। কীভাবে মানুষ এখানে প্রথম বসতি গড়ে, কীভাবে ব্রিটিশরা দখল করে, বিপ্লবীদের ‘শিক্ষা’ দেবার তরে জেল প্রতিষ্ঠা আর ব্রিটিশদের বিপ্লবীদের উপর অমানবিক অত্যাচার— সবই তুলে ধরা হয় এখানে। জেলের কুঠুরির ভেতর বন্দিদের আর্তনাদ, প্রতিটি বেতাঘাতের সঙ্গে তাঁদের ‘বন্দেমাতরম’ চিৎকার মনকে ভারাক্রান্ত করে।
পরে হ্যাভলক দ্বীপে আলাপ হয় এক ইংরেজ দম্পতির সঙ্গে। লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো তাঁরা দেখেছেন কি না জিজ্ঞাসা করার লোভ ছাড়তে পারিনি। তবে তা দেখে তাদের অনুভূতিটা জানার অভদ্রতা করার চেষ্টা করিনি। ওঁদের পূর্বপুরুষেরা যা-ই করে থাকুন, এখন তো ওঁরা আমাদের অতিথি…
পরের দিনের অভিজ্ঞতাটা ভোলার নয়। লাইফ জ্যাকেট পরে বড় লঞ্চে করে সকাল সকাল পৌঁছে গিয়েছিলাম নর্থ বে দ্বীপে। এই দ্বীপেরই ছবি থাকে ২০ টাকার নোটে। দ্বীপটি মূলত Brain Coral এর জন্য বিখ্যাত। দ্বীপের অগভীর সমুদ্রতলে লুকিয়ে আছে মহামূল্যবান কোরাল তথা প্রবালের অপরূপ প্রাকৃতিক বাগান। প্রথমে গ্লাস বটম বোটে চেপে প্রবালবাগের সৌন্দর্য গ্রহণের চেষ্টা চালাতে থাকি। কিন্তু মন ভরে না। তাই প্রবাল ছুঁতে আর স্কুবার অভিজ্ঞতা নিতে জলে নেমেই পড়ি। নেমে পড়ি বললেই অবশ্য নামা যায় না। প্রথমে ‘মুন্নাভাই এমবিবিএস’ হতে হয়। মেডিক্যাল ফর্ম ভরনা পড়তা হ্যায়। তারপর জলে নেমে মিনিট দশেকের ট্রেনিং। হাতের কিছু ইশারা শেখানো হয়। ‘সমঝদারো কো ইশারাই কাফি হ্যায়’ কথাটা কতটা খাঁটি এখানে বুঝতে পারলাম। ঠিকমতো ইশারা না করতে পারলে স্কুবা ডাইভিং থেকে বাদ। এখানেও পরীক্ষা? এই তো বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করলাম। কয়েকজন পরীক্ষায় ফেল করল। তবে আমি যে সমঝদার সেটা পাশ করার পরে বুঝতে পারলাম।
স্কুবার অভিজ্ঞতা অসাধারণ। পিঠে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে ডুবুরি বা স্কুবা ডাইভারের সঙ্গে সমুদ্রের ৩৮ ফুট গভীরে। মনে হয়, কোনও এক বিশাল প্রাকৃতিক অ্যাকোয়ারিয়ামে পৌঁছেছি। প্রায় ৫০ মিনিট ছিলাম। অক্সিজেনের নলে মুখ দিয়ে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। কিন্তু চারিদিকে নানা প্রবাল ও রঙিন মাছ, তাদের ছোঁয়ার আনন্দে সব কষ্ট লাঘব। মাছগুলো হাতে পায়ে কামড়াচ্ছিল। কিছু ‘দুষ্টু’ মাছ ঠোঁটে কামড়ে দিয়ে রক্ত বের করে দিল।
এরপরের গন্তব্য রস দ্বীপ। আবারও সাগরের বুকে বোট ভ্রমণ। এই দ্বীপেই ছিল ইংরেজদের প্রশাসনিক প্রধান কার্যালয়গুলি। সবই আজ ভগ্নপ্রায়। ব্রিটিশ বাংলো, চার্চ, ব্যারাক সবই ধরাশায়ী। তবে প্রচুর হরিণ আর ময়ূর দ্বীপের জনপ্রিয়তা বজায় রেখেছে। হরিণগুলো তো আবার মানুষের হাত থেকেই খাবার খায়, ডরায় না মোটেই।
পরদিন পোর্টব্লেয়ার থেকে ক্রুজে পাড়ি দিলাম নীল দ্বীপ। যাওয়ার সময় দেখা মিলল উড়ুক্কু মাছের। ছোট্ট নীল দ্বীপের জনসংখ্যা বেশ কম। এখানকার অন্যতম মুখ্য আকর্ষণ প্রবাল ও পাথরের মেলবন্ধনে সৃষ্ট প্রাকৃতিক সেতু। এছাড়াও হরেকরকমের প্রবাল— বোল্ডার প্রবাল, স্পজ্ঞ প্রবাল, মাউন্টেন প্রবাল, আইল্যান্ড প্রবাল এই সৈকতের মাধুর্য বাড়িয়েছে। আবার এই তটেই দেখা পাই স্টার ফিশ, সি অ্যানিমোনের। প্রকৃতি বিজ্ঞানের পড়ুয়া আমি। কিন্তু বায়োলজি ল্যাবেটরির বাইরে এই প্রথম সাক্ষাৎ আমাদের।
এরপর গেলাম ভরতপুর বিচ। সুন্দর শান্ত নীল সমুদ্রের এই বিচ যেন পর্যটকদের স্নানাগার। এখানে স্নান করে ভুরিভোজ সারলাম। বিকেলে সূর্যাস্ত দেখতে পৌঁছালাম লক্ষণপুর বিচে। তবে লাল গোল থালার মত সূর্য আমাদের একটু নিরাশ করে মেঘের মধ্যে মুখ লুকলো। ফেরার সময়ে একটা দারুণ দৃশ্য দেখলাম। এক বিদেশি পর্যটক পরিবার আলোআঁধারির বিচে বসে। তাঁদের বছর দশেকের দুই সন্তান আরেকটু দূরে সমুদ্রে স্নান করছে। সমুদ্র বেশ উত্তাল। কিন্তু তাঁরা সন্তানদের দিকে কোনও নজর দিচ্ছেন না। আমরা দেখে খুব অবাক হলাম। আমাদের বিশেষত বাঙালিদের ছেলে যদি একটু হাঁচে তাহলে তো বাবুরে কী হল রে? ডাক্তারের কাছে চল রে বলে বাবা মা ব্যাস্ত হয়ে ওঠে। ‘রেখেছ বাঙালি করে, মানুষ করনি’ কথাটি মর্মে মর্মে উপলব্ধি করলাম।
সেদিন রাত্রিবাসটা নীলেই হল। পরেরদিন আবার ক্রুজে। দেড় ঘণ্টা সাঁতরে ক্রুজ পৌঁছাল হ্যাভলক দ্বীপে। এই দ্বীপ নীল এর থেকে খানিক বড়। নীল আর হ্যাভলক দ্বীপের বেশির ভাগ বাসিন্দাই বাঙালি। যদিও অনেক বিদেশিই ভিড় জমিয়েছে এখানে। আমরা গেলাম বিখ্যাত রাধানগর বীচে। এশিয়ার সুন্দরতম বিচগুলির তালিকায় এটি স্থান পেয়েছে। একদিকে কেয়া ও নানা গাছপালা ঘেরা সবুজ আশ্চর্য সুন্দর বালিয়াড়ি, অন্যদিকে নীল সমুদ্র ও নীল আকাশ মিলেমিশে একাকার। বিচের বালিয়াড়িতে ছোট একটা ঝিল। অপূর্ব।
হ্যাভলকেই রাত্রিযাপন করে পরদিন সকালে যাই হ্যাভলকের আর এক সুন্দর সৈকত-কালাপাথর বিচ। দ্বীপ ভ্রমণ সাঙ্গ হতে ক্রুজ ‘ম্যাকরুজ গোল্ড’ আমদের ফিরিয়ে আনে পোর্ট ব্লেয়ারে।
দক্ষিণ আন্দামানে ১৫টি দ্বীপ নিয়ে গড়ে উঠেছে মহাত্মা গান্ধী মেরিন ন্যাশনাল পার্ক। সব দ্বীপগুলোরই কঠোর রক্ষণাবেক্ষণ হয়। এদের সম্পদ, সমুদ্রের তলায় রঙিন প্রবালের বিশাল ও বৈচিত্র্যপূর্ণ বাগান। যা আর একমাত্র আছে অষ্ট্রেলিয়ায়। এর মধ্যে দু’টো দ্বীপ, জলিবয় ও রেড স্কিন, পর্যটকদের জন্য। তবে দ্বীপ দু’টো ছ’মাস ছ’মাস করে বদলে বদলে খোলা থাকে। কারণ কোনও দ্বীপে সারাবছর মানুষের আগমন ঘটলে প্রবালের বৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এখন জলিবয় খোলা। সকালে পোর্টব্লেয়ার থেকে বেরিয়ে ২৫ কিমি দূরে ওয়ান্ডুর পৌঁছালাম। সেখান থেকে বোটে জলিবয়। পর্যটক, বিশেষত ভারতীয়েরা, ফেলে ছড়িয়ে দূষণ বাড়ায়। দূষিত পরিবেশে প্রবালের বেঁচে থাকা মুশকিল। তাই এসব দ্বীপে প্লাস্টিক কঠোর ভাবে মানা। এমন কী জলের বোতলও নয়। ওয়াটার বোতল ভাড়া পাওয়া যায়। বোট থেকে নামলাম ফ্লোটিং জেটিতে। সিমেন্টের জেটি প্রবালের ক্ষতি করতে পারে বলে এমন বাবস্থা। এখানে গ্লাস বটম বোটে কিছু কোরাল দেখিয়ে নিয়ে গেল মূল দ্বীপে। তারপর আবার গ্লাস বটম বোটে দ্বীপের সামনের ও পিছনের ভাগ ঘুরে প্রবাল ও সামুদ্রিক প্রাণীর বৈচিত্র্য দেখি আর মুগ্ধ হই। এই দ্বীপের প্রবাল আগের সব জায়গায় দেখে আসা প্রবালকে বৈচিত্র্যে অনায়াসে হার মানায়।
এখানেও প্রবাল আর মাছ ছুঁয়ে চাইলে উপায় আছে, স্নরকেলিং। স্কুবা হয় না। স্নরকেলিং হল মুখে নল ও মাস্ক পরে রবারের টায়ারে ভেসে সমুদ্রের নীচের প্রকৃতি দর্শন। আমি আর আমাদের সঙ্গে আসা ভাইকে একসঙ্গে বাঁধা দুটো টায়ারে আমাদের গাইড টেনে নিয়ে চলল সমুদ্রতট থেকে দূরে। স্নরকেলিংয়ের সময় স্টার ফিশ, সমুদ্র শসা হাতে নিয়ে দেখি। প্রথমে হাতে নিতে একটু ভয় করছিল। গাইড আশ্বাস দিয়ে ওগুলো হাতে তুলে দিলো। নিতান্তই নিরীহ।
খানিক বাদে দেখা মিলল শি অ্যানিমনের। তার মধ্যে খেলা করছে সিনেমার নিমো মাছ। ‘ফাইন্ডিং নিমো’ সিনেমার সেই মাছ। জেনেছিলাম, নিমো মাছের কাছে হাত নিয়ে গেলে সে নাকি হাতে কিস করে। আর সেই কিস স্কুবার মতো রক্তারক্তি মামলা নয়। অতি প্রিয় সিনেমার নায়ককে দেখে কিসের সাধ জাগল। কিন্তু আমি টায়ারে সমুদ্রের ওপরে আর সে জলের গভীরে। ইচ্ছেটা গাইডকে বলতেই উপায় হল। তার কথা মতো, টায়ার থেকে বেরিয়ে দম চেপে এক ডুবে নিমোর প্রাসাদে। আমার রাজপুত্রের দিকে বাড়িয়ে দিলাম হাত। প্রিন্স এগিয়ে এসে হাতে কিস করল। উফ! রূপকথার গল্পের মতো। প্রবল আনন্দে উঠে এসে যেই না টায়ারে ঢুকেছি, গাইড গম্ভীর মুখে জানালেন ‘কিস কারানে কা ৫০০ রূপায়া এক্সট্রা লাগে গা”। কিসের মাসুল ৫০০ টাকা! আমার আর সঙ্গী ভাইয়ের মুখ হাঁ। তা দেখে গাইড হেসে জানালেন, তিনি মজা করছিলেন।
এখানে সমুদ্রের নীচে কতরকমের রঙিন প্রবাল ও মাছ বাসা বেঁধেছে তার ঠিক নেই। Colourful Finger coral, Bolder coral, Soft and hard Mushroom coral, Honey bee coral, Jack fruit coral, Brain coral, Colour changing coral। কত বলব? সামুদ্রিক জীবের মধ্যে Sea Anemone, Sea Urchin, Sea Lili, Sea Cucumber, Clam (যে ঝিনুকে মুক্ত হয়), blue and white star fish আরও কত কী। আর মাছের মধ্যে Butterfly fish, Zebra fish, Parrot fish, Eye fish…কত কত মাছ। এই দ্বীপে জনবসতি নেই। এত রক্ষণাবেক্ষণের জন্যই এখানকার প্রবাল প্রাচীর সবথেকে সুন্দর ও বৈচিত্র্যময়। খানিকক্ষণ ঘুরে ফিরে গেলাম ওয়ান্ডুরে। এখানে একটা মিউজিয়াম দেখে গেলাম সৈকতে। মিউজিয়ামে এখানকার সমুদ্রে যে সব জীবের দেখা মেলে তাদেরই সব মডেল আছে। হোটেলে যখন ফিরলাম অন্ধকার নেমে এসেছে।
ভ্রমণের শেষদিনের ঘোরাফেরায় কোনও সমুদ্রতট নয়। আন্দামানের অন্যতম আকর্ষণ বারাটাং। সেখানে যাওয়ার রাস্তা গিয়েছে জারোয়া বসতির মধ্যে দিয়ে। আধুনিকতার আলো থেকে দূরে আন্দামানের এই জঙ্গলে জারোয়া গোষ্ঠীর প্রায় ৪০০ জন বাস করে। আমরা রাত ৩টের সময় হোটেল থেকে বেরিয়ে পরলাম। গাড়ি Jirktang এ গিয়ে অন্য গাড়ির লম্বা লাইনের পিছনে দাঁড়াল। এখান থেকে চারটে কনভয়ে পুলিশ পাহারায় গাড়িগুলি নিয়ে যাওয়া হয় জারোয়াদের জন্য সংরক্ষিত এলাকার মধ্য দিয়ে। গাড়ি ছাড়ে- সকাল ৬টা, ৯.৩০, দুপুর ১২৩০ এবং বিকেল ৩টেয়। এই রাস্তায় গাড়ি যাওয়ার কিছু নিয়ম আছে। যেমন গতি ঘণ্টায় ৪০ কিমির মধ্যে থাকবে, কোনও কারণেই গাড়ি দাঁড় করানো যাবে না, ফটো বা ভিডিও করা যাবে না, ইত্যাদি। আমাদের গাড়ি ভোর ৬টার কনভয়ে জারোয়া রিজার্ভে ঢোকে। ঘন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে প্রায় ৫৫ কিমির মতো পথ। গাড়ি এগোতে থাকে। সঙ্গে চলে সন্ধানী দৃষ্টিতে জারোয়া খোঁজা। ঘণ্টাখানেক হাল ছেড়ে দিয়েছি। মন খারাপ। তখনই হঠাৎ দেখি, উল্টোদিক থেকে একটি লরি আসছে। আর লরিতে চারটে জারোয়া শিশু হাসছে। সবাই বারমুডা পরা। এখনকার বেশিরভাগ জারোয়াই পোশাক পরে। গাড়িতে দেখলেও বন্য পরিবেশে জারোয়া দেখার ইচ্ছেটা থেকেই যায়। খানিক পর দেখা পেলাম এক জারোয়া দম্পতির। ওরা হেঁটে আসছিল।
এসে পৌঁছলাম মিডল স্ট্রেট-এ। এখান থেকে প্রথমে বড় লঞ্চ ও সেখান থেকে আবার স্পিডবোটে করে দেখতে গেলাম চুনাপাথরের গুহা। প্রচণ্ড গতিতে নীল সাগরের বুকে দু’পাশের ঘন ম্যানগ্রোভ অরণ্যের মধ্যে দিয়ে বোট ছুটে চলে। বোট থেকে নেমে পাথরের এবড়ো খেবড়ো রাস্তায় প্রায় ১.৫ কিমি হেঁটে গুহায় পৌঁছতে হয়। অন্ধকার গুহায় খানিকটা যাওয়া যায়। গুহায় বিভিন্ন অবয়বকে কল্পনায় গণেশ মূর্তি, বাঘের থাবা, শঙ্খ ভাবতে হয়। চুনাপাথরের গুহা থেকে বেরিয়ে স্পিড বোটে ফিরে গাড়িতে করে যাই কাদার আগ্নেয়গিরি দেখতে। এখানে ফেটে যাওয়া মাটি থেকে তরল কাদা বুদবুদ করে বেরোচ্ছে।
মিডল স্ট্রেট থেকে ১২.৩০ এর কনভয়ে আবার ঢুকে পড়ি জারোয়া রিজার্ভে। ফেরার সময়ও ছোট ছোট দলে বিভক্ত জারোয়াদের দেখা মিলল। দেখলাম এক জারোয়া পরিবারও। মা-বাবা বাচ্ছার হাত ধরে হেঁটে আসছিল। পরিবারের মহিলাটি অর্ধনগ্ন। বিকেলের মধ্যেই ফিরে গেলাম পোর্টব্লেয়ার। খানিক বিশ্রামের পর সন্ধ্যের দিকে হেঁটে পোর্টব্লেয়ার শহরটাকে একটু ঘুরে দেখলাম। কাছেই মিডল পয়েন্টে অল্প কেনাকাটা।…
পরদিন সকাল ১০টার মধ্যে কলকাতা বিমানবন্দরে। সেদিন কলকাতাও রঙিন। দোল উৎসব যে। ভরা রংয়ের দুনিয়া থেকে ফিরে আরেক রঙে।
সমাপ্ত