অন্য সফর

এ সবই এখনও ঘটে

ঈশানী দত্ত রায়

প্রথম যখন এসেছিলাম তখন ক্লাস ফাইভে পড়ি। লর্ড সিনহা বাড়ির ছেলে নিজের দুই শিশু সন্তানকে, অভিযোগ, পুড়িয়ে মেরে সংবাদ শিরোনামে। সৈকতাবাস, তার সামনে চিলড্রেন পার্ক, সৈকতাবাসে মোগলাই পরোটা ছিল বিলাসিতা।
তার পরেও এসেছি, তখন ক্লাস ইলেভেন। সমুদ্রের ধারের রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে কানে এল, ‘‘আপনারা কেমন বাবা-মা? বাচ্চা পিছনে পড়ে আছে, খেয়াল নেই?’’ দাঁড়িয়ে পড়ে সকলে দেখলাম, এক পাঁচ-ছয় বছরের বালিকার হাত এক ত্রিশের মহিলার হাতে গুঁজে দিচ্ছেন এক ভদ্রলোক। মহিলার পাশে দাঁড়িয়ে আরেক ভদ্রলোক। গণমন্তব্যে কিছুটা অপ্রস্তুত। আমরা চলতে শুরু করি। কিছুক্ষণ পর স-বাচ্চা সেই যুগল আমাদের ছাড়িয়ে এগিয়ে যান। পুরুষটি মহিলাকে বলেন, ‘‘তাড়াতাড়ি হাঁটতে পারোনি? সেই ধরে ফেলল?’’ বাচ্চাটিকে তবে রেখে যাওয়া উদ্দেশ্য ছিল!
এখন এলাম। সমরেশ সরকার, ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়েরা সংবাদ-জীবনে এসে গিয়েছেন।
নাইটির উপরে গামছা জড়ানো, স্লিভলেস স্মার্টের হাতে তাবিজকবজ, বারমুডা-হাফপ্যান্ট, থিকথিকে ভিড় ছাপিয়ে এখনও রয়ে গিয়েছে আকিশোর দেখে আসা ঝিনুকের জিনিস, বেলুন ফাটানোর বোর্ড। ঝালমুড়ি, ভেলপুরির টান। তবে এখন ভাটার সময় বিচের মধ্যে আলো করে থাকে ভেলপুরির দোকান, চোখের সামনে হঠাৎ উড়তে থাকে আলোর গঙ্গাফড়িং, আসলে সাবানের গোলার বুদবুদ। এখনও দু’টাকায় জিনিস পাওয়া যায় এখানে। সমুদ্রের স্রোতে পা ভিজিয়ে গ্রামের বউ কাঁখে বাচ্চা নিয়ে মোবাইলে কাউকে বোলে, ‘‘নদীর ধারে গো, দাঁড়িয়ে আছি!!’’
একটি অমোঘ আশ্চর্য, সমুদ্রের তীরে বসে থাকার মতো জনতা!!! নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত…
এবং কয়েকটি সংলাপ…
একেবারেই মধ্যবিত্ত তিন যুবকের দল। একজনের প্রশ্ন, ‘‘দাদা, সবই তো বৌদির জন্য কিনলে, নিজের জন্য কিনলে কী?’’ দু’বার প্রশ্নটা শোনার পর উত্তরটা এল, ‘‘বউয়ের জন্য কিনলাম, মেয়ের জন্য কিনলাম, সবইতো আমার!’’
রাস্তার ধারে টুকিটাকির দোকানে সদ্য দম্পতি হওয়া তরুণ-তরুণী। ছেলেটি বলে, ‘‘কী কিনবে? বলো, বলো।’’
মেয়েটি বলে, ‘‘হাতা, একটা হাতা।’’
বিষণ্ণ তরুণের আক্ষেপ, ‘‘সংসারি, সংসারি!!!’’
এ সবই এখনও ঘটে…।

সমাপ্ত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *