দীপক দাস
ভারতচন্দ্রের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় মাধ্যমিকে পড়ার সময়। সেই অমর পঙক্তি, ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে’ দিয়ে।
‘অন্নপূর্ণা ও ঈশ্বরী পাটনী’। ‘অন্নদামঙ্গল’-এর কাব্যাংশ। পরে উচ্চমাধ্যমিকে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে আবার দেখা। গোটা পনেরো নম্বরের সেই ইতিহাস শিক্ষা। সে বছরের উচ্চমাধ্যমিকে রায়গুণাকরের দাম বেশি ছিল না। ‘টীকা লিখ’র সাজেশনে স্থান পেয়েছিলেন। ফলে বেশি পড়া হয়নি। স্নাতকস্তরে বেশ ভাল মতো জানলাম ‘রায়গুণাকরে’র গুণাবলী। বিশেষ করে সেই রোম্যান্সবিলাসি বয়সে বিদ্যাসুন্দর নিয়ে স্বাভাবিক একটা আগ্রহ ছিল।
কিন্তু মধ্যযুগের শেষ উল্লেখযোগ্য কবির বাড়ি যে আমাদের জেলাতেই তা জানার আগ্রহ ছিল না। আমাদের বাড়ি থেকে খুব বেশি দূরে নয় সেটি। স্নাতকস্তরের জানলাম। বাসকন্ডাক্টরদের মুখে শুনতাম বা বাসে লেখা থাকত পেঁড়ো নামের জায়গাটি। সেটাই যে আদতে কবির জন্মভূমি পাণ্ডুয়া বা পাঁড়ুয়া, সেটাও জানা হল। কিছুদিন আগে এক মঙ্গলবার টুটুলের পকোড়া খেতে যাওয়ার সময়ে দর্শনও হল কবির জন্মভিটের। একটা বাড়ির বারদালানে কয়েকজন বয়স্ক বৈকালিক আড্ডা দিচ্ছিলেন। তাঁদেরই জিজ্ঞাসা করা গেল, ‘কবির বাড়ি কোথায় ছিল?’ তাঁরা আঙুল দিয়ে ভিটেমাটি নির্দেশ করলেন। দেখলাম, মাটি আছে, ভিটে নেই। শুধু কতগুলো ইটের স্তূপ। আর একটা ভাঙাচোরা দরজার কাঠামো।
অবশ্য তার উল্টোদিকেই রাস্তার একপাশে বেশ ঝকঝকে স্মতিমন্দির আছে কবির। তার দেওয়ালে-ফলকে কবির বংশ পরিচয়, তাঁর সম্পর্কে কে কী বলেছেন, কে সেই স্মৃতিমন্দির উদ্বোধন করেছেন, তার খতেন দেওয়া। আর দেওয়া কবির প্রবাদ হয়ে যাওয়া বিভিন্ন পদ। কম বয়সে অনুমোদিত এবং জনসমক্ষে পাঠযোগ্য আদিরসের সন্ধান দেওয়ায় কবিকে বেশ ভাল লাগে আমার। তার থেকেও বেশি ভাল লাগে তাঁর প্রবাদসম পদের জন্য। কী সব বাস্তবদর্শন!
এখন প্রবল শীত চলছে। আমরা অনায়াসে কবির দ্বারস্থ হয়ে ঠান্ডার বাড়াবাড়ি প্রকাশ করতে পারি— ‘বাঘের বিক্রম সম মাঘের হিমানী’। চারিদিকে এখন অশুভ জোটের জোরাজুরি। দুই ক্ষতিকর জোটকে আমরা তো বলতেই পারি, ‘হাঁড়ির মুখের মতো মিলে গেল সরা’। ধরা যাক কেউ ‘মন্ত্রের সাধনে’র জন্য ‘শরীর পাতন’ করে চলেছেন। কিন্তু কেউ তাঁকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। একসময় তো প্রবল ক্ষোভে তাঁর মুখ থেকে বেরিয়ে আসতেই পারে— ‘আদর কাজের বেলা তার পর অবহেলা’।
আহা। কী বাস্তব! ঘোর বাস্তব!
সমাপ্ত