জলযাত্রা বিশেষ ভ্রমণ

টাকির টুকটাক

মধুরিমা দত্ত

 

বৃষ্টিময় কলকাতা এবং বাংলাদেশ

বড্ড হিসেব করে ব্যাগপত্তর গুছিয়ে ‘চলি হে’ বলার মধ্যে যে আভিজাত্য আছে, হুট বলতেই ‘চল পানসি বেলঘড়িয়ার’ মধ্যে তা নেই। কিন্তু এই আচমকা সফর গুলোই বড্ড টানে।

কোথায় যে টানে, কেন যে টানে এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজা অবসরের কাজ। রোব্বারের শহরে একটা সদ্য নিকোন উঠোনের গন্ধ থাকে। বৃষ্টি পড়লে তো কথাই নেই। আমার মতো মানুষ, যাদের পায়ের তলায় সর্বদা সরষে সরষে ডাক তাঁদের জন্য এমন রোববার আদর্শ বেরু-বেরু দিন। এমন সুযোগ যখন জুটেই গেল তখন তা হাতছাড়া করা মহাপাপ বলে রাজি হয়ে গেলাম। কোথায় যাচ্ছি জানি না, কখন পৌঁছব জানি না। সঙ্গী আছে গাড়ি, আর প্রিয় কিছু গান।

বৃষ্টি কাদা আর জ্যাম পেরিয়ে গাড়ি যখন কৈখালি থেকে রওনা দিল তখন বেলা ১ টা। রথের দিন বৃষ্টি হবেই বলে শুনে আসছি সেই কোন ছোটবেলা থেকে। মৌসুমি বায়ুর এমন তাজ্জব রথপ্রীতি দেখে অবাকই হতাম। ঠিক রথের দিনেই বৃষ্টি থইথই, মেলাপণ্ড, কাদা কাদা করে তবেই যেন তার শান্তি।  গাড়ি চেপে জানতে পারলাম গন্তব্য বসিরহাট, টাকি। দু’পাশ সবুজ, মধ্যে মেঠো মেঠো ঘরবাড়ি। রাস্তার অবস্থাখানা দেখে বোঝ দায় যে রাস্তার উপর গর্ত হয়েছে না গর্তের উপর রাস্তা।  দু’পাশেই বসতি, কোথাও কোথাও মাঠের মধ্যে একটা দু’টো স্টেজ বাঁধা। কোথাও আবার তাঁর উপর সাউন্ড বক্স লাগিয়ে জোরে হালফিলের গান বাজছে। বুঝলাম, ইদের প্রস্তুতি চলছে জোর কদমে। বেরনোর আনন্দে এবং তাড়ায় সকাল থেকে কিছুই পেটে পড়েনি। ঘণ্টাখানেক আরও চলার পর বুঝলাম পেটের খিদে যে কোনও রোম্যান্টিসিজমকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিতে পারে। রাস্তার ধারে খাবার দোকান প্রায় নেই বললেই চলে। অগত্যা ঠান্ডা জল আর চিপসই ভরসা।

প্রায় শেষ দুপুরে পৌঁছলাম গন্তব্যে। বসিরহাটের হাসনাবাদ এলাকার ছোট্ট শহর। গাড়ি থেকে নামলাম যখন বেলা তিনটে।  ইছামতীর হাওয়া বয়ে আসছে। সঙ্গের বন্ধু আঙুল তুলে দেখালেন, ওপারে বাংলাদেশ। একনদী তফাতে দাঁড়িয়ে আছি আমরা, পশ্চিমবঙ্গের সন্তানেরা।

খিদে, ক্লান্তি এবং মিনি সুন্দরবন

নদীর ধারে সুন্দর করে বসার ব্যবস্থা আছে। তাঁর ধারেই রয়েছে সমস্ত সরকারি এবং বেসরকারি অতিথিশালা। যার কোনওটিই আমাদের রাতের থাকার ঘর দিতে পারল না। শনি, রবি এবং সংগে ইদ জুড়ে সোমবারের ছুটি! টানা উইকএন্ড মানেই বাঙালির ছোট্ট সফর। ফলত যে হোটেলেই যাই না কেন ঠাঁই নাই ঠাই নাই! তেমন হলে না হয় ফিরেই যাওয়া যাবে এই ভেবেই নদী লাগোয়া একটা রেস্টুরেন্টে আমরা দুপুরের খাবার খেতে ঢুকলাম। এখানেই দ্বিতীয় আশাভঙ্গ। “ভাত তো হবে না দাদাদিদিরা”। হবে না মানে, ইয়ারকি নাকি! ভাতের হোটেলে ভাত নেই—বলতে বলতেই খেয়াল হল বেলা ৩.৩০টে পেরোচ্ছে।  এই সময়ে আর এই ছোট্ট হোটেলে কেনই বা ভাত থাকবে। মুখের অবস্থাখানা দেখেই বোধহয় দোকানদার বললেন, “চাউমিন খেয়ে নিন আপাতত, সঙ্গে চিকেন ‘লালিপপ’ দিই?” চিনের চেয়ারম্যান যখন আমাদের চেয়ারম্যান হয়ে উঠতে পেরেছে তখন চিনের চাউমিন ইছামতীর চাউমিন হতে বাধা কোথায়? দোকানদারই বললেন,  টোটো নিয়ে মিনি সুন্দরবন ঘুরে আসতে। বিকেল পাঁচটায় বন্ধ হয়ে যায়।  হাতে তখনও বেশ কিছুটা সময়।  অজস্র টোটোর মধ্যে থেকে একটাকে বেছে নিয়ে চললাম মিনি সুন্দরবন। সঙ্গী মেঘ, ডানপাশে ইছামতী, বাঁ পাশে ছোট ছোট ঘর, সবুজ পানাপুকুর, সীমান্তমানুষদের ঘরবাড়ি।

মিনি সুন্দরবন

স্থানীয় পঞ্চায়েত এবং  বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স এই মিনি সুন্দরবনের দায়িত্বে। ইছামতীর ধারে ছোট্ট ম্যানগ্রোভ জঙ্গল একখানা। জঙ্গলে ঢোকার জন্য বাঁধানো সামান্য পথ আছে। অনেকেই টোটো থেকে নেমে টিকিট কেটে সেই পথ দিয়ে ঘুরে সেলফি তুলে ফিরছেন। আসলে এভাবে হয় না। নাম মিনি সুন্দরবন অথচ বনেই যদি না যাই, মন তো ভরে না! একটা ভিউ পয়েন্ট বানানো হয়েছে বনের মধ্যে। তার সিঁড়ি ধরে নেমে গেলেই কাদা মাখা জঙ্গলের পথ। এতখানি ঘোরাঘুরি করেও ঠিক পোষাচ্ছিল না। ইছামতী আছে, বাংলাদেশ আছে, রেপ্লিকা সুন্দরবনও আছে। তবু কি এই বাঁধানো পথে সেই সফরনামা লেখা যায়?

কাদায় নামতেই জঙ্গলের চেহারা বদলে গেল। পায়ের তলায় সুড়ুত করে সরে গেল বাচ্চা কাঁকড়া।  আরেক পায়ের নিচে চাপ দিল ছোট ছোট শ্বাসমূল। নোনামাটিতে অক্সিজেন নিতে গাছ তার শিকড় এভাবেই মাটির উপর তুলে রাখে। বইয়ে নিউম্যাটোফোরের কথা সেই ছোট্ট বেলায় পড়েছি। স্পর্শ করলাম এই প্রথম। ভয়ানক পিচ্ছিল এই রাস্তা। এই কাদায় বেসামাল হলেই ধপাস! সেই চেহারা দেখেই বিএসএফ পাচারকারী হিসেবে জেলেও পুরে দিতে পারে। এই সমস্ত জায়গায় ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেলই আমাদের আদর্শ। মাথা ভর্তি অ্যাডভেঞ্চার আর পা ভর্তি কাদা নিয়ে পা টিপে টিপে চললাম জঙ্গলে। নুয়ে থাকা গাছের ডাল ধরে এক পা এগিয়ে দু’পা থেমে সে এক ভয়ানক ব্যালান্সের খেলা। কাঁটাওয়ালা গাছ, তাতে জড়িয়ে থাকা শামুক, নাম না জানা ফুল। দক্ষ ট্রাপিজ আর্টিস্টের মতো সব ভারসাম্য সামলে পৌঁছলাম নদীর ধারে। ইছামতীর ধারে। একটাই নদীর জল ছুঁয়ে আছে দুই দেশ। এক সাঁতারেই পার হয়ে যাওয়া যায় নদী। পেরোলেই সাতক্ষীরা, বাংলাদেশের জায়গা। যে কাদামাটিতে দাঁড়িয়ে রয়েছি বাংলাদেশের মাটি ছুঁয়ে আসা জলই তো ভিজিয়েছে তাকে। যে হাওয়ায় আমার চুল উড়ছে, ক্লান্তি মুছে যাচ্ছে আসলে সে তো বাংলাদেশের গাছের পাতা ছুঁয়ে আসা হাওয়া।

বাংলাদেশের সাথে এই আত্মীয়তা বোধ আমার বহুকালের। বাবার মুখে শোনা বাংলাদেশের গল্পগুলোই আমার সেরা গল্প সম্পদ। দেশভাগ আমি দেখিনি, মুক্তিযুদ্ধও না। বাবা দেখেছে। বাবার শৈশব জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে ওই দেশের বহতা স্মৃতি। এখনও দু’টো দেশকে আলাদা ভাবতেই পারি না। ভারত বাংলাদেশ ক্রিকেট ম্যাচ হলে মনে হয় দু’টো পাড়ার মধ্যে খেলা হচ্ছে। ওদেশের রান্না, লালনের কথা, নদীদের গল্প সকলই বড্ড প্রিয়। তাই মৌলবাদীদের চরমপন্থার কথা শুনলে ভেতরে দহন হয়, টের পাই। আসলে কষ্টের আনাগোনার তো কোনও পাসপোর্ট নেই!

মাঝেমাঝেই মনে হয় নদী বা পাখির মতো হতে পারলে ল্যাটা চুকে যেত। নদীর ইচ্ছা মতো কখনও ওই দেশের মাটি ভেজাতে পারে কখনও এদেশের। নদীর কোনও শত্রু নেই, মিত্রও না। একই নদীর জলে এদেশেও ধান ফলে, অন্য দেশেও আবাদ হয়।  পাখির মতো উদারও হওয়া হল না। সীমা এবং সীমান্তের কচকচানি নিয়েই আমাদের এই ম্রিয়মান যাপন। দেশ আসলে ভাগ তো হয় না, দেশের মানুষগুলোর মধ্যে দেওয়াল তুলে দেওয়া হয় অহেতুক। ভিজে পায়ে কাদার গন্ধ মাখা সেই বিকেলে আরও একবার মনে হল ওপারে যে বাংলাদেশ, এপারে সেই বাংলা, মাঝখানে নাক উঁচিয়ে আছে, থাকুকগে পাহারা। সন্ধ্যা নামার মুখে, বাংলাদেশের মাটির উপরের যে আকাশ, তাতে হালকা লালচে মেঘ। এবার ফিরতে হবে।

ব্যালান্সের খেলা শেষবারের মতো সামলে মূল ভূখণ্ডে ফেরা। কিন্তু কাদা পা নিয়ে তো টোটোয় চড়া যায় না, জল চাইতেই গ্রামের মেয়েরা দেখিয়ে দিল বাড়ির চাপাকল। চাপাকলের পাশে একটা বারান্দায় গৃহশিক্ষক সবে সন্ধ্যাবেলার টিউশানি শুরু করেছেন। শুনতে পেলাম আধো আধো গলায় ৪ এর ঘরের নামতে পড়ছে কেউ। কেউ দুলে দুলে ছড়া মুখস্থ করছে। আরেকটু দূরে এক প্রবীণা দাওয়ায় শুকোতে দেওয়া বড়ি, শুকনো লঙ্কা তুলে নিচ্ছেন ঘরে। সন্ধ্যা নামছে বিলম্বিতে। বহুকাল এমন ঘরোয়া সন্ধ্যা নামা দেখিনি। নিশ্চুপ, ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক আর মাঝে মাঝে হাসির শব্দ, ছড়া মুখস্থের একঘেয়ে সুর –সব মিলেমিশে এই সীমান্তগ্রামে অদ্ভুত নস্টালজিয়া ঘন হতে শুরু করেছিল। বড় অদ্ভুত তৃপ্তি। এখানে প্রবেশের সময় বিএসএফের কাছে নিজের পরিচয়পত্র জমা দিয়ে যেতে হয়েছিল। ফেরত নিতে গিয়ে এক সেনা জানালেন আমাদের জন্য চিন্তায় ছিলেন তারা। আর সব টোটোই ফিরে এসেছে প্রায়। আমরা ফিরছি না দেখে উনি আমাদের পাচারকারী ভাবছিলেন কি না জানার বড় ইচ্ছা ছিল। প্রচণ্ড চা তেষ্টা না পেলে হয়ত ওনাদের সাথে খেজুরে আলাপ করাই যেত। কিন্তু সকলের মুখেই প্রগাঢ় ক্লান্তি।

নদীর ধারের দোকান থেকে চা খাওয়া পর্ব যখন মিটল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা। যদিও এখানে এসে রাতে থাকার কোনও প্ল্যানই ছিল না তবু এই ভরা সন্ধ্যায় মনে হচ্ছিল একটা বিছানা আর গরমভাতের বড্ড দরকার। এই দু’টো পেলেই (সাথে ইছামতীর হাওয়া) আজকের মতো জীবন সার্থক। কিন্তু আগে থেকে বুকিং নেই, ঘরও তেমন কেউ সন্ধান দিতে পারেননি তা দুপুরেই জিজ্ঞাসা করে জেনেছি। তবু ইছামতীর হাওয়ায় কী ছিল জানি না, ক্লান্তি উজিয়ে আমরা চললাম হোটেল সন্ধানে। কেউই আশার ‘আ’ টুকুও দেখাতে পারলেন না। প্রায় সব হোটেলে তল্লাশি চালিয়ে যখন প্রায় ঠিকই করে ফেলেছি কলকাতায় ফিরেই যাব শেষ হোটেল জানান দিল ঘর একখানা আছে। বিছানা আর গরম ভাতের স্বপ্ন সবে চোখের সামনে ভাসতে শুরু করেছে এমন সময়ে সেই বিচ্ছিরি বিপত্তি। সাতজনের দলে এক দম্পতি এবং তাঁর সন্তান রয়েছে। হোটেলের নিয়ম অনুযায়ী ম্যারেজ রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট দেখাতে হবে। নচেৎ ঘর মিলবে না। এমন তাজ্জব নিয়ম ইহজন্মে শুনি নাই বলে বেশ খানিক তর্ক হল। সম্ভাব্য সমস্ত জোর খাটিয়েও যখন ঘর মিলল না অগত্যা ক্লান্তি নিয়ে ফিরে যাওয়াই শ্রেয় বলে ঠিক হল।

কিন্তু আগেই বলেছি, ইছামতীর হাওয়ায় কিছু একটা আছে। আলবাত আছে। মিনিট খানেক নদীর ধারে জিরনোর জন্য বসেছি এমন সময় একজনের ফোনে বন্ধুর ফোন। তাঁকে আজকের হয়রানির কথা বলার কিছু পরেই দেখলাম বন্ধুটির মুখে হালকা হাসি! ফোন রেখে আমতা আমতা করে জানালো ফোনের ওপারের বন্ধুর পরিচয়সূত্রে একখানা ঘর মিলতেও পারে। তবে হোটেল না, খানিক হোম স্টে বলা যায়। দু’খানা ঘরে সাতজন কুলিয়ে নিতে হবে। কুলিয়ে মানে কুলিয়ে!! আমাদের তখন একটা শতরঞ্চি হলেই কেল্লাফতে আর এ তো সাক্ষাৎ ঘর দু’খানা। খানিক ফোনাফোনি সেরে আমাদের দুই কমরেড চল্ল বাড়ি পরিদর্শনে।  আমার বেশ ভালোই লাগছিল ইছামতীর সাথে আরও কিছুটা সময় কাটাতে পারব।

সন্ধ্যাকালীন নদী ও আকাশ

সঙ্গীদের বাড়ি পরিদর্শন এবং ফিরে আসার মাঝের সময়টা ঘড়ি মোতাবেক মিনিট ১৫। যদিও আমার কাছে কেমন অনন্ত ঠেকল। নদীর ধারে সুন্দর বসার জায়গা। সপ্তাহের শেষ বলে পর্যটক বেশিই। সঙ্গে বিএসএফ প্রহরী। মানুষ দেখা আমার অন্যতম পছন্দের কাজ। নদীর ধারে বসে এতোল বেতোল ভাবছি, দেখছি। চোখে পড়ল এক বিএসএফ জওয়ান আইসক্রিমওয়ালার থেকে আইসক্রিম কিনে আনছেন। ডিউটিতে থেকে এমন একখানা মিষ্টি দৃশ্য আগে দেখিনি বলেই আরও বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলাম তাঁর দিকে। আইসক্রিম কিনে একটু এগিয়ে হেঁটে নদীর ধারে বেঞ্চের দিকে গেলাম। হাতের আইসক্রিম সযত্নে এগিয়ে দিলেন এক আলতো খোঁপা। ছাপা শাড়ি যুবতীর দিকে। হাতে নিয়েই হাসি গলে পড়ল যুবতীর, তাঁর পাশে বসা সমবয়স্কা বন্ধুটিরও। এমন দৃশ্য বলাবাহুল্য আমি আগে দেখিনি। বসলেন না বটে কিন্তু যুবতীর পাশে দাঁড়িয়ে গল্প করতে লাগলেন জওয়ান। খিলখিল হাসি, আইসক্রিমে আলতো কামড় বলে দেয় এই গল্পের শিকড় আছে।  কী সেই শিকড় তা নিয়েই সাত পাঁচ ভাবছিলাম।

মাথার উপর কালো আকাশ, অন্যদিনের থেকে একটু বেশিই পরিষ্কার। একটাই আকাশ ভাগ করে নিয়েছে দু’টো দেশ। মাঝে বহতা নদী। আসলে দুই নয় স্রেফ, সব দেশের আকাশ একটাই। কেবল মানুষে মানুষে ভাগাভাগি। ওই পাড়ে সাতক্ষীরা গ্রামে আলো জ্ব্লছে টিমটিম। ওখানেও কোনও ঘরে দুলে দুলে ছড়া মুখস্থ করছে কেউ, কেউ নামতা ভুল করছে। গতর ঘামিয়ে এসে দাওয়ায় বসে হাতপাখা নাড়ছে কেউ। মাঝে মাঝে নিজের জীবনটাকে সাইলেন্ট মোডে রেখে অন্যদের জীবন গুলো বাঁচতে ইচ্ছা করে, ক্ষণিকের জন্য বা বহুদিনের জন্য।

এসবের মাঝেই আমাদের দুই মুশকিলআসান বন্ধু উদয় হলেন। মুখের প্রশস্ত হাসি আরও চওড়া করে জানালেন, ঘরের ব্যবস্থাখানা তোফা হয়েছে। সঙ্গে গরম ভাত এবং মাংসও। প্রথমেই মনে হয়েছিল এ নদী যেমন তেমন নদী নয়, এ আমাদের আজ যেতে দেবে না কিছুতেই। গরমভাত এবং বিছানার স্বপ্ন আমাদের নিয়ে চলল হোম স্টের দিকে। আসলে হোম স্টে বললেই আমাদের পাহাড়ের কথা মনে আসে, সেটাই যথাযথ। টাকির এই ঘরখানি বানানো পর্যটকের জন্যই। বিশেষ সময়ে কোথাও খালি না থাকলে এখানে আশ্রয় মেলে। বিশেষ করে ইছামতীতে দুই বাংলার দুর্গা বিসর্জনের সময়। আমাদের মতো অগোছালোদের যারা এই আশ্রয়টুকু জুগিয়েছেন তাঁদের অশেষ ধন্যবাদ জানিয়ে হালকা ঘুম, গভীর নাক ডাকানির রাত নামল মাথায়।

ব্যাক টু কংক্রিট ক্যাকফোনি

কথা ছিল সকাল সকাল রওনা হতে হবে। ইদে সরকারি ছুটি হলেও আমাদের মতো মন্দ কপালদের সেদিন আপিস। তাই চা, ডিম সেদ্ধ আর জিলিপির রাস্তা পেরিয়ে গাড়ি ছুটল কলকাতা। পথে নতুন জামা মানুষের ভিড়, নমাজ পড়তে যাচ্ছেন সকলে। ছোট বাচ্চাদের হাতে আইসক্রিম, কাচের চুড়ি, একটু ঢিলে হওয়া সালোয়ার। এসব পেরিয়ে চললাম।

ওই পাড়ে বাংলাদেশ পড়ে রইল। একটা নদী পড়ে রইল। অনেক ১৯৪৭ আর ১৯৭১ পড়ে রইল। কাঁটাতার পড়ে রইল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *