দীপক দাস
হু হু করে ঢুকছে তুলো! দেখতে দেখতে টুকরো টুকরো তুলোয় কামরা ভরে গেল। হঠাৎই! উড়ছে। ঘুরছে। মাথায়, গায়ে, গালে, পোশাকে, টুপিতে লেপ্টে যাচ্ছে।
তুলো নয়। ওগুলো সব কাশফুলের টুকরো। ট্রেনের প্রবল গতিতে গুচ্ছ কাশফুল আলগা হচ্ছে। আর হু হু করে ঢুকছে ট্রেনের কামরায়। জানলা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখি, রেললাইনের পাশে কাশের বনে তখন প্রবল আলোড়ন।
অষ্টমীর দুপুর। রীতিমাফিক আমরা পাড়ার মণ্ডপ ছেড়ে সফরে। বেশ কয়েক বছর পুজোর অন্তত দু’টো দিন দূরে কোথায় রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে আমাদের গ্রুপের। সেই রীতি মেনে রামপুরহাট থেকে চেপে বসেছি দুমকাগামী প্যাসেঞ্জারে। ছয় ছন্নছাড়া। অফিসের চন্দনদা সন্ধান দিয়েছিল নতুন পথের। রামপুরহাট থেকে দুমকা পর্যন্ত নতুন ট্রেন রুট চালু হয়েছে। পাহাড় কেটে পাতা হয়েছে লাইন। সেটা আসল তথ্য নয়। পাহাড় কাটা লাইন ভারতের বহু জায়গায়। কিন্তু এই রুটের বিশেষত্ব লাইনের দু’পাশে। অনন্য প্রকৃতি। চন্দনদার রাতের সঙ্গী আমি। নাইটে শিফটে কতদিন ওই রুটের কথা হয়েছে। আর সেইসঙ্গে ঘনঘন তাগাদা, ‘কবে যাবি?’ অবশেষে যাত্রা। চন্দনদা বাদ। আটকে পড়া মানুষ। গৃহী তো!
অষ্টমীর দিন মলুটি থেকে রামপুরহাট ফিরেছিলুম। মলুটিতে প্রেমশঙ্করের দোকানে সেই সকালে শালপাতার ঠোঙায় মুড়ি-ঘুঘনির জলখাবার কখন আরও গভীরে তলিয়ে এখন প্রকাশ উন্মুখ। ফলে পেয়ারার দিকে স্বাভাবিক নজর। রামপুরহাট-আজিমগঞ্জ এইসব লাইনে পেয়ারা বিক্রির কেতাই আলাদা। কলকাতা শহরের মতো চার ফালি করে মাঝে ছুরি দিয়ে ঝালনুন বা বিটনুন ঢুকিয়ে নিজের কর্তব্য সারেন না পেয়ারাওয়ালারা। তাঁরা পেয়ারা পরিবেশনার প্রস্তুতিতেই খদ্দেরের জিভে হাফ লিটার জল ঝরানোর ব্যবস্থা করেন। প্রথমে ডাঁসা পেয়ারা নিপুণ ছুরি চালনায় কুচি কুচি। তারপর সেই কুচিতে অল্প ঝালনুন, আন্দাজ মতো বিটনুন ছড়িয়ে দেন। তারপর সেই মিশ্রনে মেশান সরষের কাসুন্দি। নুনে জারানো, কাসুন্দিচর্চিত সেই পেয়ারার টুকরো টুথপিকের মতো খুঁচি দিয়ে খুঁচিয়ে মুখে ফেলার পরে…। ইন্দ্র তো নিজেকে সামলাতেই পারল না। পেয়ারাওয়ালা মাল আমাদের হাতে তুলে দেওয়ার আগেই এক খাবলা বসিয়ে দিল। খাবার দেখলে ছেলেটা বড়ই চঞ্চল হয়ে পড়ে।…
পেয়ারা শেষ হল, ট্রেনও ছাড়ল। পরিকল্পনা মতো কচি মানে শুভ বৈদ্যকে ডানদিকের জানলায় আর দীপুকে বাঁদিকের জানলায় বসিয়ে দেওয়া হল। একটা স্টেশন, একটা ছবি যেন বাদ না পড়ে। আমি, আমাদের দলের আরেক শুভ ওরফে সৌগত আর বাবলা রইলুম দর্শকের ভূমিকায়। ভাল কিছু দেখলেই দু’জনকে সজাগ করব। রাস্তায় খাওয়ার জন্য মলুটি থেকে কিছু দেশি ডিম সিদ্ধ করে নেওয়া হয়েছিল। ইন্দ্র ডিমের ঝোলাটা আঁকড়ে বসে রইল! ভূপ্রকৃতি বাদ দিয়ে ডিমের আকৃতি যাচাই করছিল বসে বসে।…
রামপুরহাটের লাইনের জঙ্গল পেরিয়ে ট্রেন তখন জোর চাক্কা। দু’পাশের প্রকৃতি মনোরম। আদিগন্ত ধানক্ষেত। দূরে ধান্যসমুদ্রের শেষে হয় পাকা রাস্তা নয়তো গাছপালার সীমানা। চেনা ছবি। সেই ছবিতে আমাদের চাঞ্চল্য জাগেনি স্বাভাবিকভাবেই। ফলে আমরা যা করি। এর ওর পা টানাটানি খেলা। যদিও চোখ জানলার দিকে। কিছুক্ষণ পরে ট্রেনের গতি কমলো। একটা স্টেশন। কোন স্টেশন দেখতে পাইনি। প্ল্যাটফর্ম বাঁদিকে পড়েছিল। কে যেন বলল, স্টেশনটার নাম আদলপাহাড়ি। ছিমছাম। প্রচুর গাছপালা স্টেশনের চারপাশে।
আদলপাহাড়ি ছাড়াতেই ট্রেনের কামরায় পুষ্পবৃষ্টি। কাশফুলের বৃষ্টি। যেন সিনেমার কোনও রোমান্টিক গানের শ্যুটিং। ফুল ঝরছে এবার পাখিও ডেকে উঠবে। বা সেই চির চেনা উপমা, পেঁজা তুলোর মতো তুষারপাত হচ্ছে। নায়ক হয়তো নায়িকার দিকে হাত বাড়িয়ে এখুনি গেয়ে উঠবে, ‘ইয়ে কাশ্মীর হ্যায়…’। জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখি, লাইন ঘেঁষা কাশবনে যেন কেউ বিশাল জোরে ফুঁ দিয়েছে। সে বোধহয় প্রকৃতি নামক বিরাট শিশুটি। মেলা থেকে সাবানগোলা জলের বুদবুদ তৈরির খেলনা কিনেছে। কাশের মেলা তার সাবানগোলা জল। আপন খুশিতে ফুঁ দিয়ে চলেছে। সেই ফুঁয়ে কাশগুচ্ছ থেকে ছিন্ন হয়ে আকাশে ভেসে যাচ্ছে ফুল। দল বেঁধে ঢুকে পড়ছে ট্রেনের কামরায়। আমাদের মন আর শরীর ভরিয়ে দিচ্ছে।
কাশ নিয়ে আমরা তো আপ্লুত! কিন্তু সঙ্গের দুই উদ্ভিদবিদের মনে কি তার কোনও প্রভাব পড়েছে? একটু সংশয় জাগল। ওদের কাছে কাশের এত ওড়াউড়ি তো নিতান্তই জৈবিক প্রক্রিয়া। টিকে থাকার লড়াই। তার প্রমাণও তো আমাদের গালে, পোশাকে। প্রতি কাশখণ্ডের সঙ্গে একটা করে বীজ। কাশের কেশগুলোকে বীজগুলো প্যারাসুটের মতো ব্যবহার করে আরও দূরে ছড়িয়ে পড়েছে। পরিষ্কার রায়গুণাকর ভারতচন্দ্র, ‘আমার সন্ততিরা যেন থাকে’ বেঁচেবর্তে। আমার আশঙ্কার মধ্যেই দীপুর গলা পেলুম, ‘ওফ! কাশফুলের ভিডিওটা ফাটাফাটি। বাঙালি লাফাবে। বিভূতিভূষণ আর সত্যজিৎ বাঙালির মনে যা ঢুকিয়ে গেছেন!’ তারপরেই চোখে পড়ল, ট্রেনের সিটে কাশমাখা টুপিটা রেখে কচি ছবি তুলছে। যাক! বটানিস্টরাও কাশাবেগ উড়ছেন!
ফুল খেলায় মন ভরতেই ইন্দ্র পেটের অস্তিত্ব টের পেল। ডিমের খোসা ছাড়াতে শুরু করল। তারপর হাতে হাতে পরিবেশন। ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছিল তো! ইন্দ্র আমাদের দলের ক্যাপ্টেন হ্যাডক। কোনও গুরুগম্ভীর সমস্যার মধ্যেও সুরাপ্রিয় ক্যাপ্টেন বলতে পারে, ‘তাহলে এবার বোতলটা খোলা যাক’। ইন্দ্রও তেমনি বলতে পারে, ‘তাহলে এবার ডিমটা খেয়ে ফেলা যাক’। খেয়ে নিলুম আমরা। তারপর ওকে একটু খোঁচালুম, বেছে বেছে বড় ডিমটা নিজের জন্য রেখেছিলি?’ প্রথমে হাউহাউ করে উঠল ইন্দ্র। তারপর ওর বাঁধা লব্জ প্রয়োগ করল, ‘ওকী কথা!’
ট্রেন তখন পুরোদমে ছুটছে। আমরা কাশের প্রভাব কাটিয়ে আবার গবাক্ষ অনুসারী। ফাঁকা ট্রেন। ইচ্ছেমতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে, পা তুলে, তাকিয়া ঠেস দেওয়ার মতো করে বসে সফর করছি। বাবলা তো জমিদারদের মতো আধশোয়া হয়ে জানলায় পা তুলে দিয়ে চলেছে। ট্রেন সফরের শুরুতে একটা দেবাসুরের কাণ্ড করে ফেলেছিলাম আমরা। রামপুরহাটে ট্রেনে ওঠার সময়ে কচি বলেছিল, পিছন দিকে ওঠা ভাল। তাতে বাঁক নেওয়ার সময়ে পুরো ট্রেনটার ছবি তোলা যাবে। সেইমতো উঠলাম শেষ কামরার আগের কামরায়। কিন্তু কিছুক্ষণ পরে মুঘলসরাইয়ে রেলের গার্ডবাবু শুভ বলল, ‘আমরা তো পিছনের দিকে নয়, সামনের দিকেই উঠেছি।’ আমি বললাম, ‘সে কী! ইঞ্জিন তো ও প্রান্তে লাগানো।’ অভিজ্ঞ গার্ডবাবু আঙুল তুলে দেখিয়ে বললেন, ‘ওই দ্যাখো, ইঞ্জিন যাচ্ছে।’
কিছুক্ষণ পরে দড়াম করে একটা আওয়াজ আর সেই সঙ্গে ঝাঁকুনি। শুভ বলল, ‘ইঞ্জিন লাগল।’ ছিলুম লাস্টের দিক থেকে দ্বিতীয়। হলুম ফার্স্টের দিক থেকে দ্বিতীয়। সমুদ্র মন্থনের সময়ে দেবতারা কায়দা করে নাগরাজ বাসুকীর লেজের দিকে ছিল। আর অসুরেরা ছিল মুখের দিকে। যাতে মন্থনের কষ্টে বাসুকী বিষ ওগরালে তারা বেঁচে যায়।
আমরা ইঞ্জিনের চক্করে দেবতা থেকে অসুর হয়ে গেলুম। তবে কচিকে দমানো গেল না। ও বলল, ‘কী আছে! লেজের দিক থেকে বাঁক না তুলে সামনের দিক থেকে তুলব।’
কচি তাই করতে শুরু করে দিয়েছে। কোন ফাঁকে উঠে গেছে। দরজায় দাঁড়িয়ে ক্লিকাচ্ছে। ততক্ষণে ট্রেন ঢুকে পড়েছে পিনারগড়িয়ায়। ছোট, ছিমছাম গাঁয়ের স্টেশন। লোকজন নেই বেশি। কেউ নামল না। উঠলও না।
এলোমেলো গল্প করছিলুম আমরা। পিনারগড়িয়া ছাড়াতেই আমাদের চোখ সজাগ হয়ে উঠল। ডিজেল ইঞ্জিন জোর চাক্কায় যাওয়ার জন্য ধক ধক করে শ্বাস জড়ো করছে। আর প্রকৃতি তার পরতের পর পরত খুলে রূপ মেলে দিচ্ছে আমাদের সামনে। বিস্তৃত খোলা জমি। মাঝে মাঝে টুকরো চাষের জমি। টুকরো মানে টুকরোই। কোনওটা চওড়ায় হয়তো মাত্র চার হাত। লম্বায় কিছুটা বেশি। জমির ধারে একটা, দু’টো তাল বা খেজুর গাছ। কোথাও লম্বা সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে তারা। ফাঁকে ফাঁকে পলাশ-সহ অন্য গাছের জটলা। আরও দূরে আকাশের সীমানা জুড়ে গাছপালারা ঘন হয়ে জড়ামড়ি করে এগিয়ে গিয়েছে।
ট্রেন আরেকটু এগোলে একটা দারুণ ছবি চোখে পড়ল। জায়গাটায় পাথর সরানোর কাজ হচ্ছিল বোধহয়। পুরুষ, মহিলা মিলে অনেকে কাজ করছেন। খেজুর পাতায় ছাওয়া একটা তাঁবুর মতো দু’ঢালের ছাউনি। প্রবল রোদ থেকে বাঁচতে কেউ কেউ ঝাঁকড়া খেজুর গাছের নীচে আশ্রয় নিয়েছেন। একটা খেজুর গাছ আর কতটা ছায়া দিতে পারে? সূর্যের প্রবল তাপকে ছায়ার বৃত্তের বাইরে আটকে রাখতে অভিনব পন্থা নিয়েছেন মানুষগুলো। তিন চারটে তালপাতা পুঁতে দিয়েছেন পাশাপাশি। ডাঁটিটা পোঁতা মাটিতে। আর তালপাতা ছাতার মতো মাথাগুলো উঁচিয়ে রোদ আটকাচ্ছে।
প্রকৃতি আদতে পরমা। কিন্তু কোনও কোনও ক্ষেত্রে চরমাও। তাতে জীবকুলের কিছু আসে যায় না। চরমকেও পরমে বদলে নিতে পারে মানুষ তথা জীবকুল। ‘গড মাস্ট বি ক্রেজি’ সিনেমায় দেখেছিলুম, আফ্রিকার চরম প্রকৃতিতেও কীভাবে হাসিমুখে জীবনযাপন করে বুশম্যানেরা। জল নেই। তাতে কী! ভোরে ঘাসের আগায় চার ফোঁটা শিশিরবিন্দু জমা করে তো প্রকৃতি। মাটির গভীরে নানাধরনের কন্দ তার শরীরে রস জমিয়ে রেখেছে। ছেঁচে, চিপে সেই রসেই জলের অভাব পূরণ। একটা সাপ মাংস দেয়। তার চামড়া দিয়ে সুন্দর হেয়ার বা হেডব্যান্ড হয়। এই রেললাইনের ধারের এলাকাগুলোর জীবন খুব একটা পরম নয়। চওড়ায় মাত্র চার হাত জমি তারই প্রমাণ।
পাথুরে এলাকা। পাথর সরিয়ে সরিয়ে ওইটুকু জমিই প্রকৃতির সঙ্গে লড়ে ছিনিয়ে নিতে পেরেছেন কেউ। তাতেই ধান চাষ করেছেন। জলসেচের ব্যবস্থা নেই। সেই প্রকৃতিই ভরসা। জমির পরেই শুরু হয়েছে পাথুরে ভূমি। কোনও একদিন হয়তো কেউ ওই পাথর একটু একটু সরিয়ে আরও দু’হাত জমি বের করতে পারবে।
প্রকৃতি, মানুষ দেখতে দেখতে একটা স্টেশন এসে গেল। কোনও নাম নেই সেই স্টেশনের (সম্প্রতি স্টেশনটির নামকরণ করা হয়েছে। এর নাম হরিণ শিং। ভারী সুন্দর নাম। ট্রেনের সময়ও বদলেছে ২৮।০৪।২০১৮ থেকে। এখন রামপুরহাট থেকে ছাড়ে ১২.২৫ এ ) প্ল্যাটফর্মে সাইনবোর্ড আছে। কিন্তু তার হলুদ রঙের উপরে কোনও আঁচড় পড়েনি। দীপুকে বললুম, ‘যাঁরা নামছেন তাঁদের কাছ থেকে স্টেশনের নামটা জান।’ দীপু জেনে বলল, পারদা। হয়তো এলাকার নাম এটাই। কিন্তু নামকরণ করা হয়নি কেন? কাছাকাছি দুই এলাকার মধ্যে টানাপড়েন চলছে? কোন এলাকার নামে হবে স্টেশনের নাম? হবেও বা। কাউকে জিজ্ঞাসার ফুরসত মিলল না।
পারদা ছাড়িয়ে কিছু দূরে যেতে আবার বিস্ময়ের ধাক্কায় পড়ে গেলুম। ট্রেনের জানলায় পরমা…প্রকৃতি। আদিগন্ত ঢেউ খেলানো ভূভাগ। মাঝে মাঝে চাষের জমি। সেই খণ্ড আর বড় জমির মিশেল। তার মাঝে, পাশে বাবলা, পলাশ গাছের একক বা দলবদ্ধ অবস্থান। সবুজের খাঁজকাটা গালিচা পার করে চোখ মেললে দূরে ঈষৎ ধূসর ভূমি। অনেকটা এলাকায় বিস্তৃত। সেই ভূমির পরে আবার সবুজের সারি। এত ঘন তাদের অবস্থান, দূর থেকে কিছুটা কালচে লাগছে। আরও দূরে পাহাড়ের সিল্যুয়েট। আমাদের জন্যই প্রকৃতি যেন যত্ন নিয়ে এঁকেছে এই বিশাল ল্যান্ডস্কেপ। আর আকাশ? তার রূপ অনেক অগ্রজ লেখকই বর্ণনা করে গিয়েছেন। আমি শুধু বলতে পারি, উদার আকাশ। উন্নয়নের উঁচু বিল্ডিং, জালের মতো উড়ালপুল তার সীমানায় খাবলা বসায়নি তো…তাই।
ট্রেন আরেকটু এগোতেই একটা ক্ষীণ জলধারা চোখে পড়ল। ঝোপজঙ্গল থেকে বেরিয়ে জলধারাটি রেলবাঁধের দিকে এগিয়ে এসেছে। উল্টো করেও বলা যায়, জলধারাটি রেলবাঁধের দিক থেকে এগিয়ে গিয়ে ঝোপের আড়ালে হারিয়ে গিয়েছে। ট্রেন আরেকটু এগোলে দূরে ঝোপের আড়াল থেকে ধারাটির আবছা শরীর বোঝা যায়। তারপর আবার হারিয়ে যায়। আবার কিছুক্ষণ পরে পুরো ধারাদেহ নিয়ে আমাদের সামনে হাজির হয়। আবার একটু ঝোপের আড়াল। আবার সামনে। তখন বোঝা যায়, জলধারাটি আসলে একটা নদী। আমাদের সঙ্গে লুকোচুরি খেলায় মেতেছে।
কী নাম নদীটার? আবার জিজ্ঞাসাবাদ। জানা গেল, নদীর নাম বাহামণি। সে তো একটা সিরিয়াল! কোনওদিন দেখিনি, তাই জানি না। তবে বাহামণি ফ্যাশনের জন্য নামটা চেনা। সিরিয়ালের নায়িকাও কি এই নদীর মতো দুষ্টু, চঞ্চল, কিশোরী? বাহামণি ততক্ষণে তার সম্পূর্ণ রূপ মেলে ধরেছে। ওর পুরো অববাহিকা আমরা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। অগভীর ঘোলাটে জলের শরীর। পাড়ে নদীর জলের মিহি বালি। যেখানে খুশি বাঁক নিয়েছে বাহামণি।
এক ঝলক দেখলে মনে হয়, বিশাল একটা ভূখণ্ডকে পাক দিয়েছে সে। সেই পাক-ভূমিতে ফুটে রয়েছে কাশফুল। প্রচুর গাছপালা। নদীর ওপারেও গাছপালা প্রচুর। আমরা মন্ত্রমুগ্ধের মতো বসে রইলুম।
ছবি— দীপশেখর দাস, শুভ (কচি) বৈদ্য এবং ইন্দ্রজিৎ সাউ
প্রচ্ছদের ছবি- বাহামণির বিভঙ্গ
(চলবে)