অন্য সফর বিশেষ ভ্রমণ

অনেক কাশ, স্বপ্নের আকাশ আর ট্রেনের জানলায় জীবন— দ্বিতীয় পর্ব

দীপক দাস

বাহামণিকে নিয়ে মজে ছিলুম। খেয়ালই করিনি কচি আর ইন্দ্র আমাদের সঙ্গে নেই!

কচিকে নিয়ে আমার একটু টেনশন ছিল। বেচারা শহুরে মানুষ। বন্ধুদের সঙ্গে প্রতি বছর রাতভর কলকাতা ঘুরে ঠাকুর দেখে। এ বছর নবমীতে তাদের পুজোসফর পর্ব ন’বছরে পড়বে। আর আমি কিনা ওকে বনেবাদাড়ে ট্রেনে চড়াতে নিয়ে এসেছি! ওর ভাল না লাগলে সফর ম্যানেজার হিসাবে আমার নাক কাটা যাবে।

খুঁজতে গেলুম কচিকে। দেখি, ব্যাটা দরজার সামনে ক্যামেরা বাগিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমি পাশে দাঁড়াতে বলল, ‘কলকাতার লাখ টাকার ঠাকুর লাগে কোথায়?’ শুনে সত্যি বলছি, হাতটা বুকের বাঁদিকে চলে গেল। স্বস্তি…স্বস্তি।

বাহামণি আবার।

ফিরে এলুম আসনে। কিন্তু ইন্দ্র? ওর ক্যামেরার ব্যাটারি তো জবাব দিয়েছে। ছবি তুলতে পারবে না। তাহলে গেল কোথায়? বড় ডিম খাওয়া নিয়ে কটাক্ষ করেছি বলে রাগ করল নাকি! হাঁক দিলুম, ‘ইন্দ্র…ইন্দ্র।’ পাশের কুপ থেকে সাড়া দিল…‘আছি আছি…কী জিনিস তুলেছি দেখো!’ ইন্দ্র এখনও বাহামণির সৌন্দর্যে মুগ্ধ। আবার চেঁচাল ইন্দ্র, ‘এই ভিডিওটা আজকেই ফেসবুকে দিয়ে দেব। ফাটাফাটি হবে।’ শুনেই হইহই করে উঠলুম আমরা। কে যেন বলল, ‘তোমার জুতো খুলে নিয়ে গরম রাস্তায় হাঁটাব।’ কে বলল, ‘অচেনা স্টেশনে জোর করে নামিয়ে দেব।’ আমি বললুম, ‘তোর রেশন বন্ধ করে দেওয়া হবে। খেতে পাবি না সারা রাস্তা।’ ইন্দ্র আবার হাউহাউ করে উঠল। আমি একবার গিয়ে দেখে এলাম ওর মোবাইল বন্দি বাহামণিকে। আবার মুগ্ধ করল ক্ষীণতনু বাহামণি।

কচি আর ইন্দ্রর দিকে নজর দিতে গিয়ে আসল লোক আমাদের পা টানাটানি থেকে বাদ পড়ে যাচ্ছেন। তিনি হলেন, গার্ডবাবু শুভ। শুভর চাকরি ক্ষেত্রের একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছে সুন্দরী পলামৌ। মালগাড়ি নিয়ে এখানকার মতোই পাহাড়, নদী, বসত পেরিয়ে রোজ যাতায়াত করে। ও যখন প্রথম চাকরিতে যোগ দেয় আমরা গ্রুপের পক্ষ থেকে ওকে একটা গান উপহার দিয়েছিলুম। মানে ওর ফেসবুকের টাইমলাইনে পোস্ট করেছিলুম। ‘কিতাব’ সিনেমার সেই কালজয়ী গান, ‘ধান্নো কি আঁখো মে রাত কা সুর্মা অউর চান্দ কা চুম্মা…’। এক কয়লার ইঞ্জিনের ড্রাইভার গাইছেন তাঁর স্ত্রীয়ের উদ্দেশ্যে। এইরকমই জঙ্গল-পাহাড় ঘেরা কোনও গাঁওয়ে রেললাইনের পাশে দাঁড়িয়ে ঝুল পড়া হারিকেন দোলাচ্ছেন স্ত্রী। হাত নাড়ছেন। আমাদের মনে হয়েছিল, ঘর ছেড়ে বিভুঁইয়ে যাচ্ছে আমাদের গ্রুপের ছেলে। ওর প্রেয়সীও হয়তো এভাবেই হারিকেন দোলাবে।

পাড়া বাহার।

মনে করিয়ে দিতেই বাবলা খেলাটা ধরে নিল। শুভকে বলল, ‘ধর, তুই এখান দিয়ে মালগাড়ি নিয়ে যাচ্ছিস। আর তোর…হারিকেন দোলাচ্ছে। কেমন হবে বল তো? আমরাও মাঝে মাঝে আসব। তোর মালগাড়িতে চেপে ঘুরব। আমাদের জন্য তখন তোর ও দেশি মুরগির ডিম তুলে দেবে। আমরা মালগাড়ির ছাদে ছাঁইয়া ছাঁইয়া গাইতে গাইতে ঘুরে বেড়াব।’ বাবলাদের কম বয়স। ওরা ছাঁইয়া ছাঁইয়া গাইবে। আমি বুড়ো। আমি পুরনো দিনের ‘ধান্নো কে আঁখো মে’ই গাইব…বলে রাখলুম। এইসব আক্রমণের সময়ে শুভ একটাই রক্ষণ নেয়। কাঁধ ঝুলিয়ে চুপ করে বসে থাকে। এবারেও তাই করল।

ইয়ার্কির ছলে বলা হলেও, কথাগুলো সত্যি। এখানকার কেউ যদি এই রুটে রেলের ড্রাইভার বা গার্ড হন তাহলে প্রায়ই ‘ধান্নো কে’ গানের দৃশ্যায়ন হবে। পাড়া বলতে আমরা, কলকাতা এবং সংলগ্ন জেলাগুলোর বাসিন্দারা, যা বুঝি, জানি তার সঙ্গে এখানকার পাড়া কিছুতেই মিলবে না। ট্রেনের জানলা বা দরজায় দাঁড়িয়ে যতদূর চোখ যায় দেখে যা বুঝেছি, ছ’টা-আটটা বা খানদশেক ঘর নিয়ে একটা পাড়া। গাছপালা ঢাকা। বাড়িগুলো বেশির ভাগই টালির বা টিনের চালের দোচালা। দেওয়াল পাকা, মাটির এবং বোধহয় পাথরের। একটা পাড়া থেকে আরেকটা পাড়া বেশ দূরে। জঙ্গলের মাঝ দিয়ে এঁকেবেঁকে চলা কাঁচা, পাথুরে বা খোয়া ওঠা রাস্তা একটা পাড়ার সঙ্গে আরেকটা পাড়ার সংযোগ রক্ষাকারী।

কাশের পাহাড়।

গাছপালার ফাঁকফোকর দিয়ে দেখা যাচ্ছে গৃহস্থালী। এখানে কোনও পরিবারের সঙ্গে দু’টো জিনিস আবশ্যিক দেখেছি। গরু আর দেশি মুরগি। ঘরোয়া অর্থনীতি। মাঝে মাঝে বিদ্যুতের খুঁটি চোখে পড়েছে। কিন্তু সেগুলো ঘরোয়া না অন্য কোনও কাজের জন্য বলতে পারব না। রাত হলে বোঝা যেত।

পাশের পাড়া।

ধাবমান ট্রেনের সঙ্গে সরে সরে যাওয়া পাড়াগুলোতে বিজলি, পানি, সড়ক, স্বাস্থ্য কীসের অভাব বলতে জানি না। ওরা খুশি, না সরকারের ওপরে খুব রাগ, বলা মুশকিল। যদি অভাব থেকেও থাকে, যদি রাগ হয়েও থাকে, তাহলেও বলব, দু’বেলা পেটপূরণ হলে, পরতে পেলে, পড়তে পেলে সন্তুষ্ট হও। বেশি উন্নয়ন চেয়ো না। উন্নয়ন মানে কর্তাব্যক্তিরা উপকরণ সর্বস্বতা বোঝেন। সেগুলো তোমাদের আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে ফেলবে। তোমরা শিকড় ছাড়া হয়ে যাবে।…

এতক্ষণ রেললাইনের ডানদিকের বর্ণনা দিচ্ছিলাম। বাঁদিকেও যে প্রকৃতি আমাদের জন্য তার সৌন্দর্য সাজিয়ে অপেক্ষা করছে, খেয়াল করিনি। দীপু একহাতে ক্যামেরা আরেক হাতে মোবাইল নিয়ে সেই সুন্দর বন্দি করে চলেছে। আমি ওর পাশে গিয়ে বসলুম। ও তখন গলগল করে ঘামছে। এই বেচারার উপরেও আমি একটা অন্যায় করে ফেলেছি। ও মাত্র একদিন আগে হিমাচল থেকে ফিরেছে। গবেষণার কাজে মাঝে মাঝেই যায়। হিমালয়ের ঠান্ডা থেকে একেবারে বাংলার প্যাচপ্যাচে গরমে। ধাতস্থ হওয়ার সময় পায়নি। টেনে নিয়ে রাঢ় বাংলার শুকনো গরমে ফেলে দিয়েছি। কষ্ট হচ্ছে ছেলেটার।

নয়নাভিরাম।

সান্ত্বনা দিয়ে কিছু বলব বলে ভাবছিলুম। কিন্তু জানলা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে হাঁ হয়ে গেলুম। সেই পরমা প্রকৃতি। কিছুক্ষণ প্রকৃতি দর্শনের পরে একটা কথা মনে হল, বাঁদিক এবং ডানদিকের রূপ কিছুটা হলেও আলাদা। সাদা চোখে সেই চাষবাস, মাঝে মাঝে তাল, খেজুর, পলাশ এবং অচেনা গাছের ভিড়। কোথাও কোথাও কাটা লালমাটির গর্তে জল জমে আছে। ঝোপজঙ্গল থেকে মাথা উঁচিয়ে থাকা টালির বা টিনের চালের পাড়া সরে সরে যাচ্ছে। খেজুর গাছের নীচে বিশ্রাম নিচ্ছেন পাথর সরানো শ্রমিক। দু’টো বাচ্চা অবাক চোখে ট্রেনের চলে যাওয়া দেখছে। তবুও কোথাও যেন আলাদা। পার্থক্যটা ধরতে পারা যাচ্ছিল না।

লেখার সময়ে দু’দিকের ছবিগুলো পরপর দেখতে লাগলুম। মনে হল, পার্থক্যটা ধরতে পেরেছি। পাহাড়মালার অবস্থানই দুই দিকের রূপের সামান্য ভেদ তৈরি করেছে। ডানদিকের পাহাড়মালা বেশির ভাগ সময়েই অনেক দূরে। বাঁদিকের পাহাড়গুলো সেই তুলনায় রেললাইনের কাছে। ফলে পাদদেশ থেকে পাহাড়ের মাথা পর্যন্ত গাছপালার যে সারি সেগুলোর অবস্থানও অনেকটা কাছে। বাঁদিকে দৃষ্টি ততটা প্রসারিত হতে পাচ্ছে না। সবুজের সারি ঘন হয়ে চোখ আটকাচ্ছে। তাতে এদিকের এলাকাটাকে মনে হচ্ছে তুলনামূলক বেশি ঘন সবুজ। বা কালচে সবুজ।

নয়নাভিরাম ২।

কিন্তু ডানদিকে পাহাড়গুলো দূরে হওয়ায় মাঝে ধানক্ষেতের সবুজ অনেকটা জায়গা জুড়ে। তারপর ফাঁকা ভূমিও চোখে পড়ছে। তারওপর বাহামণির রূপ আমাদের চোখ ধুইয়ে দিয়েছে। অতএব, ডানপক্ষ অসমান বামপক্ষ। তবে ডানদিকের কিছু জায়গায় পাহাড় কাছে চলে এসেছে। সেই সব জায়গা আবার বাঁদিকের মতোই ঘন সবুজ। অতএব ডানপক্ষ সমান বামপক্ষ। অঙ্ক মেলাতে মেলাতে ট্রেন সফর।

প্রথমেই বলেছি, পাহাড় কেটে লাইন তৈরি হয়েছে। ট্রেন মাঝে মাঝেই ছোট ছোট টানেলে ঢুকে পড়ছে। ভূগোলের ছাত্র নই। দলেও কেউ ও বিদ্যায় পারদর্শী নয়। তবে মাধ্যমিকে পড়া ভূগোলের জ্ঞান অনুযায়ী বুঝতে পারছিলুম, এখানকার পাথরেও পার্থক্য আছে। কোথাও সেই পাথর চাঁই চাঁই। গ্রানাইটের মতো শক্ত মনে হল। আবার কোথাও পাথর মনে হল স্তরীভূত। যেন মোজাইকের টাইলস পরপর সাজিয়ে সাজিয়ে ওই অংশের পাহাড়টা তৈরি করা হয়েছে।

টানেলের টানে দীপু।

প্রকৃতির মতোই এখানকার স্টেশনগুলো অনন্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। ছোট, ছিমছাম, একাকী সুন্দর। অদ্ভুত-সুন্দর সব নাম স্টেশনগুলোর। আদলপাহাড়ী, পারদা, কুরুবা, বরমাসিয়া…। এদের মধ্যে কুরুবা স্টেশনটার স্বতন্ত্রতা আছে। প্ল্যাটফর্মের লাগোয় টানা টিলার মতো ভূখণ্ড। স্টেশনের মাঝ বরাবর জায়গায় টিলার ওপরে সিঁড়ি বানানো হয়েছে। সিঁড়ি ধরে উঠলে টিকিট কাউন্টার। টিলার মাথায় সারিবদ্ধ বাঁশের খাঁচা। খাঁচার ঘেরাটোপগুলো নতুন লাগানো গাছ রক্ষা করছে। স্টেশনের একদম শেষে ছোট্ট একটা টানেলের মতো। টানেলের উপর দিয়ে রাস্তা। প্ল্যাটফর্মে শেড আছে। কিন্তু একটা যাত্রীও চোখে পড়ল না।

বরমাসিয়া।

রাজধানী কলকাতা এবং সংলগ্ন জেলাগুলির শহরতলিতে এরকম পরপর নিঝুম স্টেশন খুঁজে পাওয়া মুশকিল। মূল লাইনে তো প্রায় নেই। সিঙ্গল লাইনগুলোয় দু’চারটে মিলতে পারে। কারণ বেশির ভাগ রেলস্টেশনগুলো ধীরে ধীরে ছোটখাট বিকিকিনির কেন্দ্র হয়ে দাঁড়ায়। ফলে তুলনামূলক ঘিঞ্জি হয়ে ওঠে। আমাদের হাওড়া-আমতা লাইনে দক্ষিণবাড়ি আর ঝালুয়ারবেড় এরকম নিঝুম স্টেশন। আমার তো বেশ লাগে। এই যেমন লাগছিল কুরুবা, আদলপাহাড়ী, পারদাকে।

কুরুবা।

চলন্ত ট্রেন থেকে কয়েক মিনিটের ঝাঁকিদর্শনে গোটা এলাকার চরিত্র বিচার করা মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ নয়। কিন্তু একেবারেই যে বোঝা যায় না তা-ও তো নয়। এখানে মাঠে গাভী চরে। আর আকাশে ‘মেঘেরা গাভীর মতো চরে’। এখানে সন্ধে নামার আগে গোধূলি নামে, তার আসল রং নিয়েই। রাত নামে অন্ধকার করেই। জঙ্গলের ফাঁক দিয়ে ছিটকে পড়া বিদ্যুতের বা তেলের কোনও আলো সেই অন্ধকারকে ফিকে করতে পারে না। আকাশ ভরে যায় তারায় তারায়। দূষণের ধোঁয়াশায় লিটল স্টারদের চাকচিক্য বিবর্ণ হয় না। যখন চাঁদ ওঠে সারাদিন চড়া রোদে দাঁড়িয়ে থাকা পলাশ, তাল, খেজুরগাছগুলোর উপরে আলতো স্নেহের পরশ বুলিয়ে দেয়। ঝোপে ঝোপে চাঁদের আলো আবছায়ার সঙ্গে লুকোচুরি খেলে। অমাবস্যা দেখিয়ে দেয় কতটা কালো হতে পারে সে। বোঝা যায়…বোঝা যায়…ঝাঁকিদর্শনেই।

আমি আর কচি স্টেশনে নেমে নেমে ছবি তুলছিলুম। আমার হাতে নোটবুক, পেন আর কচির ক্যামেরা দেখে এক মাঝবয়সী যাত্রী প্রশ্ন করলেন, ‘ক্যায়া চল রাহা হে দাদা, কোই সার্ভে হো রহা ক্যা?’ আমি বাঙালির সেই ভীষণ হিন্দিতে জবাব দিলুম, ‘নেহি দাদা, হামলোগোকা ঘুমনে কা সার্ভে।’ ভদ্রলোক দ্বিতীয় প্রশ্নটি আর করেননি। আমাদের হিন্দি শুনেই হয়তো বুঝে গিয়েছিলেন, আর যাই হোক সার্ভের মতো গুরুগম্ভীর বিষয়ের লোক এরা নয়।

ফির বহি…সুন্দর।

দেখতে দেখতে এসে গেল শিকারিপাড়া। অম্বাজোড়া শিকারিপাড়া, পুরা নাম। অন্য স্টেশনগুলোর তুলনায় বেশ লোক নামলেন এখানে। এই স্টেশনেই আমাদের নেমে যাওয়ার কথা ছিল। ঠিক হয়েছিল, এখানে নেমে এলাকায় ঘুরে বেড়াব। তারপর ট্রেন দুমকা থেকে ফিরে এলে আবার রামপুরহাট ফিরে যাব। কিন্তু আমাদের এই এলাকার হাট দেখার ইচ্ছে। এখানে নামলে সারসডাঙ্গার হাট দেখা হবে না। সমস্যার কথা শুনে মলুটির তারকদা পরামর্শ দিলেন, ট্রেন সফরটা শেষ করতে। ফেরার সময়ে বাসে রামপুরহাট  ফিরলে পথে সারসডাঙ্গা পড়বে। তাতে হাটও দেখা হবে, বাসরাস্তার দু’পাশের সৌন্দর্যও দেখা হয়ে যাবে। ওই এলাকার প্রকৃতিও অসাধারণ। ফলে শিকারিপাড়া স্টেশনের ছবি তুলে আবার ট্রেনে উঠে পড়লুম।

শিকারিপাড়া।

দলের ছেলেরা ছড়িয়েছিটিয়ে গল্প করছে। নানা বিষয় নিয়েই আলোচনা চলছিল। অবশ্যম্ভাবী ভাবে একটা আলোচনা এল, রেল কোম্পানির মুণ্ডুপাত। এইরকম সুন্দর একটা জায়গা ফেলে রেখে দিয়েছে। ইউরোপ-আমেরিকা হলে পর্যটন ক্ষেত্র বানিয়ে ঠিক ডলার কামানোর ব্যবস্থা করে ফেলত। প্রবল গরমে ক্লান্ত আমরা প্রকৃতির রূপে মুগ্ধ। শীতকালে অতি মনোরম পরিবেশ মিলবে। বা বসন্তে। পলাশ ফুটবে তখন। এলাকা লালে লাল হয়ে যাবে। এখনই চোখ ফেরানো যাচ্ছে না। তখন ট্রেনের চেন টেনে নেমে যেতে ইচ্ছে করবে।

আলোচনার মাঝে ট্রেনটা হঠাৎ ঘচাং করে ব্রেক কষে দাঁড়িয়ে গেল। কী ব্যাপার? কচি গেট থেকে মুখ বাড়িয়ে বলল, ‘একটা গরু। লাইনে চলে এসেছিল।’ বেঁচে গিয়েছে। ভাগ্যিস! গরু নিয়ে এখন যা গন্ডগোল। ট্রেনচালকের হয়তো চাকরি চলে গেল!

অনামিকা স্রোতস্বিনী।

ট্রেন তখন আবার গতি নিয়েছে। শুরু হয়েছে টিলার লাইন। বাঁপাশে। মাঝে মাঝে ছোট টানেল। হঠাৎ টিলার ওপরে ঝাঁ চকচকে বিশাল দোতলা বাড়ি চোখে পড়ল। দেখে কচি বলল, ‘নিশ্চয় শহর আসছে।’ কচির কথা সত্যি করে কিছুক্ষণের মধ্যেই ট্রেনের গতি কমে এল। তারপরে দুমকা।

প্রবল গরমে বাংলা থেকে পশ্চিমের এক শহরে পা রাখল ছয় ছন্নছাড়া। প্ল্যাটফর্মে নেমেই দেখি, একপাটি কোলাপুরী স্টাইলের জুতো পড়ে। রাবণের পায়ের মাপের। এ তো ইন্দ্রর পা!

দুমকা স্টেশনের ওভারব্রিজ থেকে।

 

ছবি— শুভ (কচি) বৈদ্য, দীপশেখর দাস, এবং ইন্দ্রজিৎ সাউ

 

(চলবে)

 

key word- Rampurhat to Dumka train travel

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *