মে মাসের প্রবল গরম। আমরা হাজির বাঁকুড়ায়। ঘামতে ঘামতে, মুখে জল দিতে দিতে ঘুরছি জঙ্গলে। দুর্গা পুজোয় সপ্তমীর দিনে সকলে বাড়ি ফিরছে। পরিবারের সঙ্গে বেরবে। বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরবে। আর আমরা বাড়ি ছাড়ছি। কখনও বেগুনকোদরে ভূত দেখতে। কখনও শুশুনিয়ার জঙ্গলে। যমধারার জঙ্গলে চন্দ্র বর্মার লিপি পাঠের চেষ্টা করছি।
কেন? সে কথা বলে বোঝানো যাবে না। ছবি দেখে বোঝার চেষ্টা করুন।
তখন প্রতি মঙ্গলবার বাইক নিয়ে বেরতাম। একবার দল বেঁধে জনাইয়ে গেলাম। মনোহরা খেতে। জনাইয়ের রাজবাড়ি দেখে ঢুকে পড়লাম সেখানে। পুজোর আগে। প্রতিমা তৈরি হচ্ছিল। হঠাৎ দীপুর শখ হল মহিষাসুর হওয়ার। দাঁড়িয়ে পড়ল দোমেটে প্রতিমার সামনে।
মহিষাসুর অবতারে দীপু।
জুয়েল আমাদের সঙ্গে ঘুরতে গেলে দারুণ আনন্দ হয়। ওর মতো খোরাক পাওয়া মুশকিল। তবে অন্য কাজেও ওকে ব্যবহার করা যায়। জয়পুরের জঙ্গলে দীপু করেছিল। আমগাছ থেকে অর্কিড পেড়ে আনতে লগা করেছিল জুয়েলকে।
এই ছবিটা দেখে ভুল বোঝার অবকাশ প্রচুর। কিন্তু সত্যি কথা, আমরা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরি আর বিভিন্ন রকমের খাবার খাই। কিন্তু এরকম দোষ নেই।
ছেলেটির ভাল নাম শুভ বৈদ্য। আমরা ডাকি কচি। কিন্তু দুমকায় ঘুরতে গিয়ে সে হয়ে গেল চিনা পর্যটক।
ছান্দারের আগে বেলিয়াতোড়। সেখানে বাড়ি শিল্পী যামিনী রায়ের। ঝুঁকি নিয়ে গেট টপকে ঢুকে গেলাম বাড়িতে। সে কী উত্তেজনা। শলাকা বিদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা ছিল।
ঘোরাফেরায় আমাদের খাওয়া দাওয়া নিয়ে নানা গল্প আছে। সেগুলো বেশির ভাগই না খাওয়ারই গল্প। তবে খাবার খুঁজতে আমাদের জুড়ি মেলা ভার। জঙ্গল থেকেও খুঁজি খাবার। জয়পুরের জঙ্গলে যেমন খোঁজা চলছিল বৈঁচির। ঝোপে ঝোপে উঁকি।
আমাদের সারা জীবনের সংগ্রহ এই ছবিটা। তুলেছিল অরিজিৎ। জলসত্রে জুয়েলের কোলে কচির এই ঘুমনো বন্ধুত্বের অনন্য নির্দশন। আমরা অবশ্য ছবিটা নিয়ে নানা সময়ে খিল্লি করেছি। তার ওপর জুয়েলের হাতে লাল ফোনটাও ছিল সেই সময়ে। যে ফোনের জন্য ও আমাদের থেকে আলাদা হওয়ার চেষ্টা করে সব সময়ে।
দলে বাবলা ছোটা ডন নামে পরিচিত। ভয়ের কোনও ব্যাপার নেই। ও রাজপাল যাদবের মতো। ভারী ভারী মজার মজার কথা বলে।ওর কাণ্ডকারখানায় আমরা মাতোয়ার থাকে। কিন্তু এই ছবিটা ও কী করতে চাইছিল এখনও বুঝে উঠতে পারিনি। আমতায় গ্রুপের ফিস্টে তোলা ছবি।
দেখতে ভেজা বেড়ালের মতো। শান্ত, সুশীল। কিন্তু যে কোনও সফরে দাড়ি বাবার নানা কীর্তিতে পাগল হতে হয়। তারই এক ঝলক। শুশুনিয়া বেড়াতে গিয়ে। আরণ্যক গেস্ট হাউসের সামনের রাস্তায়।
ঘুরতে গেলে ইন্দ্র খাওয়া নিয়ে ঝামেলা করে। শোয়া নিয়ে ঝামেলা করে। ট্রেনের টিকিট কাটা নিয়ে ঝামেলা করে। ওকে বকে, শাসায় দীপকদা। কখনও কানও মুলে দেয়। কিন্তু তাতে ওর কিছু যায় না আসে না। ওর কানের চামড়া বেশ মোটা। মুলতে গিয়ে দীপকার কী হাল। হাত ব্যথা হয়ে গেল।
আবার ছোটা ডন। খালের ওপরে এই জলের পাইপটা নাকি ও বসে বসেই পার করতে পারবে। হুগলির রাজহাটের ফিস্টে।
রাজহাটেই আরেক পারাপার। এই একটা মাত্র বাঁশের সাঁকো পেরতে গিয়ে রীতিমতো ট্রাপিজের খেলার মতো সাহস দরকার ছিল। সবাই মিলে দেবপ্রিয়াকে পার করার চেষ্টায়। উৎসাহ দিচ্ছে ঋতু, পূজা আর সুদেষ্ণা।
ইন্দ্রকে আমরা গন্ডার বলি, হাতি বলি। জলহস্তী বলি। কিন্তু ভালকি মাচানে ও নিজের আত্মীয়কে খুঁজে পেয়েছিল। আমরা বলে উঠেছিলাম, বেচারা আইডেন্টিক্রাইসিসে ভুগছিল এতদিন।
প্রবল গরম। তার মধ্যেই খুঁজে পেয়িছিলাম পাহাড়ি এক নদীর খোঁজ। ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। সকলে মিলে। তারপর স্নান করতে করতে কত মজা।
কভারের ছবি— জুয়েল আর অরিজিতের খুনসুটি। জয়পুরের জঙ্গলে।
(সমাপ্ত)