চন্দন দত্ত রায়
পুরী ঘুরতে যাননি এমন বাঙালি মনে হয় খুব কম ই আছেন। পুরীর সমুদ্রের পার ছাড়াও জগন্নাথ মন্দির ও অন্যান্য সাইট সিনও আশা রাখা যায় সবাই ঘুরেছেন। চিল্কার ডলফিন দেখতেও অনেকেই গেছেন। চিল্কার কালীজাই মন্দির ও অনেকেই গেছেন। চিল্কা হ্রদের ভিতরে প্রায় ২০-২২ কিলোমিটার দূরে এই মন্দির। জলের গভীরতা মাঝিদের কথা অনুয়ায়ী কোথাও কোথাও ৬০-৭০ ফুট হবে। সমুদ্র আর হ্রদের পার্থক্য বোঝা কোনও কোনও সময় মুশকিল হয়ে ওঠে।
পুরনো অ্যালব্যাম ঘাটতে ঘাটতে ছবিগুলো সামনে এল। মনে হল, আজ আপনাদের কালীজাই মন্দিরের কাহিনীটাই বলি। কাহিনীটা শোনা নৌকোর মাঝি ও মন্দিরের পুরোহিতদের কাছে।
কেনই বা হ্রদের এত ভিতরে ও পাহাড়ের গায়ে একটা মন্দির তৈরি হল, কে-ই বা করল। তারই ইতিহাস বর্ণনার চেষ্টা এই কলমে।
‘জাই’ এক নাবালিকা। চিল্কা থেকে কিছু দূরে বানপুর নামে এক গ্রামে তার বাড়ি।তখন তো খুবই অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেওয়া হতো। সেই রকমই ‘জাই’ এর বাবা চিল্কার মধ্যে থাকা পাড়িকুদ গ্রামের এক যুবকের সঙ্গে জাইয়ের বিয়ে দেন।
বিয়ের পর ‘জাই’ শ্বশুর বাড়ি থেকে বাপের বাড়ি আসে। বেশ কিছু দিন পর রীতি অনুযায়ী জাইয়ের বাবা মেয়েকে শ্বশুর বাড়ি দিতে ওই হ্রদের জলেই নৌকা করে চললেন।
বেশ জোরে জোরে হাওয়া। নৌকার দুলুনিতে ‘জাই’ ভীষণ ভয় পেয়ে বাবাকে আঁকড়ে তার বুকের মধ্যে লেপ্টে থাকে। এখানে ধার করা একটা উড়িয়া ভাষা ব্যবহার করলাম ‘ভল করি না অ বা–রে- নাউরি, ঝিওকু মাড়ু দিডর” অর্থাৎ”ভালো করে নৌকা চালারে মাঝি, আমার মেয়ের ভয় করে।”
সেই আশঙ্কাই সত্যি হয়। প্রবল ঝড়ের মধ্যে পড়ে নৌকা। নৌকাডুবি হয়। মাঝি ও বাবা কোনও রকমে বেঁচে গেলেও ছোট্ট ‘জাই’ নিখোঁজ হয়ে যায়। তার সলিল সমাধি হয় ওই রাক্ষুসে হ্রদে।
এর পর থেকেই হ্রদে ওই পাহাড়ের কাছাকাছি অঞ্চলে নৌকাডুবি হলেই ‘জাই’য়ে অতৃপ্ত আত্মাই এই কাজ করছে, এই রকম ধারণা থেকে নৌকা চলাচল, মাছ ধরার কাজ কমে যায়।
পাড়িকুদের তখনকার রাজা ছিলেন” জগন্নাথ মান সিং। তিনি এই গভীর হ্রদের ওই পাহাড়ে একটি মন্দির নির্মাণ করান। মন্দিরের নাম হয় কালীজাই মন্দির। ওই মন্দিরের দেবতা ‘জাই। মা কালীর প্রতীক হিসাবে এখানে ‘জাই’কে পুজো করা হয়।
চিল্কার সমস্ত মৎস্যজীবী ‘কালীজাই’য়ের পুজো করেন। মকর সংক্রান্তির দিন ওই দ্বীপে মেলা বসে।
ছবি- লেখক
(সমাপ্ত)