সৌগত পাল

সেই ছোটো বেলার কবিতায় পড়া নদী।
‘আমাদের ছোটো নদী চলে বাঁকে বাঁকে’। রবি ঠাকুরের কোপাই। আমাদের ‘সহজপাঠ’এর কোপাই। কিন্তু এখন নদীতে বৈশাখ মাসে হাঁটু জলও থাকে না। শুকনো খটখটে। নদী বলে তখন একে চেনা যায় না। রেল কোম্পানির বোর্ডে এর নাম দেখে বুঝে নিতে হয়। ওহ এই সেই কোপাই! আমাদের নস্টালজিয়ার কোপাই। এখন বর্ষাকালে কাদাগোলা জল বয়ে নিয়ে চলেছে কোপাই। নদীর উপর দিয়ে খানা-সাহেবগঞ্জ লুপ লাইন গিয়েছে। কেন নদীর নাম কোপাই? জানি না।

নদীটির নামে একটা স্টেশন আছে। যদিও স্টেশন থেকে নদীর দূরত্ব অনেকটাই। বরং বোলপুরের পরে প্রান্তিক স্টেশন থেকে নদীর দূরত্ব বেশ কাছাকাছি। আয়তনের দিক থেকে কোপাই স্টেশন নদীর মতই ছোটোখাটো। সারাদিনে কয়েক জোড়া প্যাসেঞ্জার ট্রেন দাঁড়ায়। ভিড় সেরকম হয় না। ওই আমাদের হাওড়া-আমতা লাইনের মাকড়দহ স্টেশনের মতো। বরং আগে ও পরের স্টেশন প্রান্তিক বা আহমদপুর স্টেশনে লোকসমাগম অনেক বেশি। কিছু এক্সপ্রেস ট্রেন দাঁড়ায়। নির্জন স্টেশনই বলা যায়। স্টেশন লাগোয়া কিছু গাছপালা রয়েছে। সেগুলোই একটু ভাল লাগে।

নদীর উপর মানুষ সেভাবে নির্ভর করে না বলেই মনে হয়। এই রেল পথে আমার নিত্য আনাগোনা। মাল ট্রেন নিয়ে বারবার যাওয়া আসা করতে হয়। ট্রেনের চালককে পতাকা নাড়তে নাড়তে তাকিয়ে দেখি, দু’পাশটা। যতটুকু চোখে পড়ে আরকী। নদীর কাছাকাছি বাড়িঘর সেভাবে চোখে পড়েনি। দেখা যায় দু’চারটে। গাছপালার ভিতর দিয়ে চকচকে টিনের চাল। কিন্তু চাষ জমি রয়েছে। খুব বেশি না হলেও রয়েছে।

সন্ধ্যের পরে বা রাতে যখন ট্রেন নিয়ে ফিরি তখন কোপাই আরও নির্জন হয়ে যায় স্টেশন, নদী দু’জনেই।
ছবি লেখক
(সমাপ্ত)