সৌগত পাল
গুমানী কথাটার অর্থ হিন্দিতে অভিমানী। ছোট্ট একটা নদী। ঝাড়খণ্ড রাজ্যের সাহেবগঞ্জ জেলায় অবস্থিত। সামনেই নদীর নামে স্টেশনও। সেটাও নদীর মতোই ছোটোখাটো। আগের স্টেশন কোটালপুকুর। আর একটু বড় স্টেশন পাকুড়। গুমানী ছোটখাট হলেও একটা কারণে গুরুত্বপূর্ণ। কারণটা হল, এটা রেল বর্ডার। মানে পূর্ব রেলের হাওড়া আর মালদহ ডিভিশনের বর্ডার। এই স্টেশন পর্যন্ত হাওড়া ডিভিশনের সীমা। তারপর মালদহ ডিভিশনের শুরু।
গুমানীর পরেই লিঙ্ক কেবিন। সেখান থেকেই লাইন দুদিকে চলে গিয়েছে। একটা সাহেবগঞ্জ হয়ে জামালপুর, ভাগলপুরের দিকে। অন্যটা ফরাক্কা হয়ে মালদহ। গুমানীর পর সাহেবগঞ্জ লাইনের স্টেশন হল বারহারোয়া। আর মালদহ লাইনের স্টেশন হল বোনীডাঙ্গা। রাঁচি ও ভাগলপুরের মধ্যে চলা বনাঞ্চল এক্সপ্রেস এই স্টেশনে দাঁড়ায়। এছাড়া কয়েকটি প্যাসেঞ্জার ট্রেন দাঁড়ায়।
গুমানী স্টেশনের তিনটে প্ল্যাটফর্ম। যাত্রী মোটামুটি খারাপ হয় না। স্টেশনে গাছপালা আছে বেশ ভালই। স্টেশনের কাছাকাছি বেশ কয়েকটি দোকান আছে। ফলের দোকান, চায়ের দোকান। এখানকার একটি চায়ের দোকান নিয়ে দারুণ গল্প রয়েছে। চায়ের দোকানি মাঝে মাঝেই খদ্দেরদের চ্যালেঞ্জ করেন। তাঁর গর্ব, তিনি অত্যন্ত ঘন দুধে চা করেন। একফোঁটা দুধ খদ্দেরের হাতের মুঠোর উপরে দিয়ে বলেন, যদি গড়িয়ে পড়ে তাহলে সেদিন সকলকে বিনে পয়সায় চা খাওয়াবেন। নিজের অভিজ্ঞতাতেই দেখেছি বিহার-ঝাড়খণ্ড-উত্তরপ্রদেশের মানুষ বড়ই দুগ্ধপোষ্য। দুধ নিয়ে তাদের প্রচুর গর্ব। মাঝে মাঝেই খোঁটা দিয়ে বলেন বাঙালিরা তো জল মেশানো দুধ খায়।
গুমানীর কাছাকাছি জনবসতি বেশ ঘন। আর স্টেশনের পাশে আছে আল সালেম এডুকেশন সেন্টার। অনেকটা বড় জায়গা জুড়ে তৈরি এই মিশনে ছেলে আর মেয়েদের পড়াশোনার ব্যবস্থা আছে।
মালগাড়ি নিয়ে গুমানীর উপর দিয়ে কত জায়গায় যাই। থামিও। কিন্তু নদীর নাম কেন যে গুমানী তা জানি না। কিসে তার অভিমান তাও জানি না। খোঁজ নেওয়ার কাউকে পাইনি।
সম্পাদকীয় সংযোজন: আমাদের গ্রুপের সদস্য রত্না রায় গুমানি নিয়ে কিছু তথ্য দিয়েছেন। গুমানি নামে এক আউলিয়া ছিলেন। তিনি সাধারণ মানুষের সমস্যা নিয়ে গান লিখতেন। নদীটি মুর্শিদাবাদের বহরমপুর থেকে এসে সাহেবগঞ্জের দিকে গিয়েছে। সাগরদিঘিতে কবি গুমানি দেওয়ানের নামে মেলা হয়। এই দেওয়ানের নামেও নদীর নাম হতে পারে। এই তথ্য সত্যি হলে একটা সমস্যা দেখা দেবে। গুমানি তখন আর নদী থাকবে না। নদ হয়ে যাবে।
(সমাপ্ত)