রবিশঙ্কর দত্ত
গ্রাম-মফঃস্বলে ঘাস-ওঠা উঠোন যেমন দেখতে হয়, ঠিক সেইরকম। আশপাশে কাউকে জিজ্ঞেস করলে কানে আসবে, ‘উও তো গোশালা হায়।’
সকাল সন্ধ্যে ‘বহু ঘরের এক উঠোনে’র মতো সেই গোশালা আমার কাছে নেশার মতো হয়ে গিয়েছিল। কয়েক ঘণ্টা পর পর তাঁর রূপটানে বদল তো এই শীতের বাকি দার্জিলিংকে হার মানাচ্ছে। পাহাড়ি হিসেবে এই গোশালা অনেকটা নীচে।
ঠিক কত নীচে? আমার তিনদিনের ফ্রেন্ড-ফিলোসফার-গাইড মিস্টার প্রধানের কথায়, ‘‘বেশ খানিকটা। আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে সেই হরিদাস হট্ট থেকে ঘণ্টা খানেকের হাঁটাপথ।’’
রূপসী লেবং কার্ট রোড থেকে বাঁ দিকে সেন্ট টেরেসা আর লোরেটো কনভেন্ট স্কুলের পাশ দিয়ে এগিয়ে খাদের মতো রাস্তার শেষটায় দাঁড়িয়ে মিস্টার প্রধানের সাজানো বাড়ি। তার দোতলার বারান্দা থেকে চারপাশে শুধু দার্জিলিং। সবুজ পাহাড়—সরাসরি রোদে কোথাও চকচকে, কোথাও ভেজাভেজা। ধোঁয়া ধোঁয়া মেঘের দল—কেউ এগোচ্ছে, কেউ দাঁড়িয়ে। সেই সব কিছু টপকেই বারবার আমার চোখ গেছে সেই গোশালায়। সকাল সাতটায় সেখানে একেবারে কচিকাঁচা—একটা ফুটবল নিয়ে ছোটাছুটি। রোদ বাড়তে লোমশ পাহাড়ি কুকুর নিয়ে তাদের এ মাথা ও মাথা লুকোচুরি। আরও বেলা বাড়তে জটলা পাকানো বড়দের আড্ডা। সারাদিন এভাবেই বদলায় সেই পাড়ার ছবি।
সারাদিন গোশালা প্রাণময়। টানটান।
মোবাইল ফোনে সাধ্যমতো জুমে তার যতটা কাছাকাছি পৌঁছেছে চোখ, তার থেকে অনেক বেশি পৌঁছেছে মন। বল ধরতে না পেরে, কুকুরের সঙ্গে গড়াগড়িতে সরল হাসিতে পাহাড়ের এক বিশেষ নির্মলতা ছুঁয়েছে শহুরে মাথা।
শুধু রাতেই তা মিশে যেত আঁধারে। আড়াল নেওয়া চা-পাইনের মতো। ঘুটঘুটে অন্ধকার।
পাহাড়ের টান চিরন্তন। সেই টানটান করে রাখে এই শৈশব। শুধু গোশালা-ই নয়। সেই শৈশব ছড়িয়ে সর্বত্র। শীত-পোশাকে ঢেকে থাকা মুখগুলিই তো শীত-কাঁপুনি ভুলিয়ে দেয় থেকে থেকেই।
তাই তো ভুলিয়েছিল বহুশ্রুত সেই ‘নমস্তে।’ চকবাজার থেকে লালাকুঠি পর্যন্ত পৌঁছতেই দুই হাঁটু কাঁপতে শুরু করেছিল। তারপর আচমকা হাওয়ায় নড়াচড়া বন্ধ হয়ে আসছিল জাপানি বুদ্ধমন্দিরে।
পিছনে ফিরতেই হাসি ফুটল সকলের মুখে। একঝাঁক ‘নমস্তে’ শোনা গেল শান্তির উঠোনে।
এবার গোশলায় যাওয়া হয়নি। বলা ভাল, যাইনি। তাই পরের বারের যাওয়া নিশ্চিত।
ছবি-লেখক
(সমাপ্ত)
দারুণ লেখা, সুন্দর ছবি।
অসাধারণ। দূর থেকেই এত সুন্দর, কাছে থেকে না কত ….