অন্বেষা কর
একটু ঘুরে আসি উত্তরের দিক থেকে, সুউচ্চ হিমালয়ের পাদদেশ থেকে, খরস্রোতা তিস্তা নদীর পাড় থেকে। যারা পাহাড় ভালোবাসেন তাদের জন্য পর্যটনের সেরা ঠিকানা দার্জিলিং। তবে আজ দার্জিলিংয়ের কথা বলব না। সে কথা অন্যদিন হবে। আজ বলি সেবক, কালিম্পংয়ের কথা। শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং যাওয়ার পথে এই সেবকে তিস্তাকে ডিঙিয়ে যেতে হবে। শিলিগুড়ি শহর থেকে মাত্র ৪৫ মিনিটের দূরত্ব। যারা সোজা পথে এই সেতুতে না নেমে দার্জিলিং চলে যান, তাঁরা একপ্রকার বঞ্চিত হন এই অপূর্ব সুন্দর জায়গা থেকে। সেতুটি করোনেশন ব্রিজ নামে পরিচিত।
শিলিগুড়ি শহর ছাড়ালে আপনি হালকা জঙ্গলে প্রবেশ করবেন। সবুজের স্বাদ নিতে নিতে বুঝতেই পারবেন না কখন পাহাড় ধরা দেবে। সমতল থেকে পাহাড়ে উঠবেন। পাহাড়ি ফুলের গাছ, ছোট্ট বাড়ি আপনার চোখে পড়বে। প্রকৃতি তার সবটুকু উজাড় করে দিয়েছে এখানে। দু’দিকে উঁচু সবুজ পাহাড়, মাঝখানে প্রবল বেগে ধাবমান তিস্তা, তার ঘন সবুজ জলে হিল্লোল তুলে। সে কী গর্জন তার! কোনও এক অজ্ঞাত কারণে সে আজ এত খরস্রোতা, পাথরে ধাক্কা খেয়েও সে ক্ষান্ত নয়। বরং চলার পথের বাধা তাকে আরও শক্তিশালী করে তুলেছে। এই সৌন্দর্য আপনি সেতুর উপর থেকে দেখতে পাবেন। দেখুন মন প্রাণ ভরে দেখুন। প্রকৃতি যা বোঝানোর চেষ্টা করছে তার সবটুকু শুষে বুঝে নিন।
একটু এগিয়ে যান, কিছুদূর পাহাড়ে সিঁড়ি ভেঙে উঠলেই দেখবেন কালীমাতা মন্দির। অল্প সংখ্যক বাঁদর আপনার চোখে পড়বে। এছাড়াও কিছু নাম না জানা পাহাড়ি ঝর্ণা। দেখতে পাবেন, পাহাড়ের গায়ে পাথরে কাটা সিঁড়ি বেয়ে জলধারা বয়ে চলেছে ক্রমাগত। চারিদিক সবুজ, শান্ত।
তবে অনেকেই সেবকে নামেন। সেতুটি দৈর্ঘ্যে বেশ বড়, এখানে তিস্তা বেশ চওড়া। পাহাড়ি রাস্তা দেখলে আপনিও বিস্ময়ে ভাবতে বসবেন, এসব রাস্তা, সেতু বানানো কত কঠিন। এখানের জীবনযাত্রা কত কষ্টকর। এছাড়া আরও কিছুটা এগিয়ে দেখবেন তিস্তায় রাফটিং (Rating) করছে অনেকে। সব মিলিয়ে জায়গাটা অসাধারণ। নাই বা গেলেন দার্জিলিং পর্যন্ত। শিলিগুড়ির আশেপাশেই এরকম অনেক জায়গা আছে যা আপনার বেশ ভাল লাগবে।
এর পর সেবক ছেড়ে ওই রাস্তাতেই পাকদণ্ডী পথ বেয়ে চলে যান কালিম্পংয়ের দিকে। যেতে যেতে আপনার চোখে পড়বে স্কোয়াশ গাছ। ফলগুলো দেখতে অনেকটা পেঁপেঁর মতো। তবে গাছটি লতানে। এই সবজি স্বাদে খুব সুন্দর। ছোট্ট কাঠের বাড়ির সামনে একচিলতে বারান্দা। সেখানে দাঁড়ালে আরামসে কাঁচা-মিঠে রোদের অনুভূতি নেওয়া যায়। কালিম্পং শহর ফেলে আপনারা এগিয়ে যান ডেলো পাহাড়ের দিকে। ফুলের বাগানের জন্য এই জায়গা বিখ্যাত। পাহাড়ের একদম শীর্ষে এই স্থান। অক্টোবর মাসে যদি যান শীতকালীন ফুলের বাহার দেখবেন। টিকিটের প্রবেশ মূল্য মাত্র ১০ টাকা। দরজার বাইরে সৌভাগ্য হলে খেতে পারবেন ফুচকাও।
ডেলো পাহাড়ের অপর পাহাড়ে আছে দূরপিনদারা মনস্ট্রি। বুদ্ধদেবের দর্শন করে আসতেই পারেন। এছাড়া দেখার আছে পাইন ভিউ নার্সারি। এখান থেকে আপনি পুরো কালিম্পং শহরকে এক ঝলকে দেখতে পাবেন। বিভিন্ন প্রজাতির অর্কিড এবং এমন প্রজাতির ক্যাকটাস এখানে আছে। যা আপনি এর আগে কখনও দেখেননি। এক একটা ক্যাকটাস দৈর্ঘ্যে আপনাকে ছাড়িয়ে চলে গিয়েছে। সেসব ক্যাকটাসে ফুলও হয়। আবহাওয়া বেশ ঠান্ডা থাকে। শহরে নেমে এসে হোটেল পাবেন। খাওয়াদাওয়া সেরে নিন। ইচ্ছে হলে থাকতেও পারেন। খুব সুন্দর জায়গা।
অল্প কয়েকদিনের ছুটিতে যদি আসেন শুধু এসব জায়গার অনুভূতি নিতে প্রাপ্তি কোনও অংশে কম হবে না।
ছবি— সায়ক মান্না ও ঋদ্ধিমান লাহিড়ী
(সমাপ্ত)