ভিস্তা ডোম
পাহাড়িয়া বাঁশি বিশেষ ভ্রমণ

ক্যাম্প…কমলালেবু…বরোলি…ভিস্তা ডোম— শেষ পর্ব

সৌগত পাল

তিস্তার জলে রাফটিং করার ইচ্ছে ছিল। সকালে দেখলাম জল কমে গিয়েছে। তাই লুচি তরকারি খেয়ে তিস্তাকে বিদায় জানিয়ে চললাম কার্শিয়াংয়ের দিকে। কার্শিয়াংয়ে সন্তোষদার ছেলে বোর্ডিং স্কুলে পড়াশোনা করে। ছেলেকে কিছু জিনিসপত্র দিয়ে সন্তোষদা আমাদের নিয়ে চললেন ডেলো পাহাড়ে।

আমরা শুধুই বেড়াতে যাচ্ছি। বৈঠক করতে নয়। ডেলো পার্কে ঢোকার জন্য টিকিট করতে হয়। ভিতরে খোলা মাঠ আর সাজানো পার্ক। আর বাংলো। কয়েকটা দোকান আছে। তাতে শো-পিস, বৌদ্ধ তন্ত্রমন্ত্রের জিনিস পাওয়া যায়। পার্ক থেকে কার্শিয়াংয়ের ছবি তুলে বেরিয়ে পড়লাম। পার্কের বাইরে ছোট ছোট খাবারের স্টল। ১৫ জনের দল একটা স্টলে আঁটবে না। তাই দু’টো দোকানে ভাগ করে বসলাম। মিক্সড রাইস খেলাম। মাংস, সবজি, ডিম দিয়ে তৈরি। খেতে বেশ লাগল।

ডেলোর বাংলো।

ওখান থেকে বেরিয়ে গন্তব্য সায়েন্স মিউজিয়াম। কলকাতার সায়েন্স সিটির মতোই। তবে আড়ে বহরে ছোট। কিছুক্ষণ কাটানো হল। তার পর গাড়ি চলল ক্যাকটাস গার্ডেন। বুড়ির ভাষায় ট্যাকটাস গার্ডেন। ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে তোলা। নানা রকমের ক্যাকটাসের সম্ভার। টিকিট কেটে ঢুকতে হয়। চারা কিনতে চাইলে ইচ্ছেপূরণ হবে। ওখানে চা খেতে খেতে পাহাড় দেখতে দেখতে মনটা একটু খারাপ হয়ে গেল। আজ পাহাড়কে বিদায় জানাতে হবে। সমতলে নেমে যাব একটু পর। যদিও আবার আসতে হবেই এখানে। রানির সঙ্গে সাক্ষাৎ বাকি থেকে গিয়েছে। রানি মানে কাঞ্চনজঙ্ঘা।

ডেলো পার্ক থেকে তোলা ছবি।

আরও কিছুক্ষণ থাকার ইচ্ছা থাকলেও উপায় নেই। দলের দু’জন আজ রাতে ট্রেন ধরে ফিরে যাবে। বাকিরা থাকব জলপাইগুড়িতে। গাড়ি ছেড়ে দিল। পিছনে দার্জিলিংকে রেখে এগিয়ে চললাম। গাড়িতে সকলে চুপচাপ যাচ্ছিল। বুঝতে পারলাম, সকলেরই মন খারাপ। রথীনদা আবার খুঁজে খুঁজে দুঃখের গান চালাতে শুরু করল।

দার্জিলিং।

জলপাইগুড়ি পৌঁছে আমাদের চালক দাদাদের বিদায় জানাতে হল। তিনদিন ওঁরা আমাদের একজন হয়ে ছিলেন। পাহাড়ের মানুষ গোমড়া মুখে কাউকে দেখিনি। যে কোনও দোকানের কর্মচারী সবসময় হাসিমুখে আন্তরিক আপ্যায়ন করেছেন। ‘যথা ইচ্ছা তথা যা’এর মিস্টার ঘাসপুস বলেছিল, জলপাইগুড়িতে একটা বাজার আছে। সেখানে অনেককিছু পাওয়া যায়। তাই ভাবছিলাম সন্ধ্যাবেলা একটু ঘুরে আসি। ঘাসপুস একটা উপদেশ দিয়েছিল, পকেট ভর্তি করে নিয়ে যেতে। ছেলেটার অভিজ্ঞতার ভাঁড়ার উপচে পড়ছে। একসময়ের গুরুকে অব্দি উপদেশ দিয়ে ধন্য করে দেয়। রাস্তার হদিশ জানতে এক দোকানে গেলে, দোকানদার জানালেন, বাজার বেশ খানিকটা দূরে। আর আমরা যেতে যেতে বাজার বন্ধ হয়ে যাবে। বাজার ঘোরা আর হল না। ঘরে এসে সারাদিনের তোলা ছবি দেখতে লাগলাম। আর বিপদ তখনই হল।

ক্যাকটাস গার্ডেন।

ক্যামেরা থেকে ফোনে ছবি চালাচালি করতে গিয়ে কিছু ছবি সমাধিতে চলে গেল। সেটা তখন বুঝিনি। যখন বুঝেছি তখন আর কোনও উপায় ছিল না। পাহাড়ের কাছাকাছি বুঝলে আবার গিয়ে ছবি তুলে আনা যেত। আবার তো পাহাড়ে আসতে হবে। তখন আর কিছু বাদ পড়বে না।

রাতের খাবার খেতে বেরোলাম। সামনেই একটা হোটেলে খাওয়া দাওয়া হল। কষা মাংস আর ভাত বা রুটি। পাহাড়ে শুধু মাংস খাওয়া হয়েছে। কাল আলিপুরদুয়ার গিয়ে মাছ খাওয়া হবে এখন থেকেই ঠিক হয়ে গেল। রাতে অ্যালার্ম দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে ৭:২০ তে ট্রেন।

ভিস্তা ডোমে।

সকালে বেরোতে বিশেষ সমস্যা হয়নি। খালি একটা ব্যাগ ছেড়ে কিছুটা চলে আসায় আবার ফিরে আসতে হয়েছিল আমায়। এসব ছোট ঘটনা ঘটতেই পারে। একবার স্টেশনে টিকিট কেটে টিকিট না নিয়েই ট্রেন ধরতে চলে এসেছিলাম। টিকিট কাউন্টারের ভদ্রলোক নিজে প্ল্যাটফর্ম অবধি এসে টিকিট দিয়ে গেছিলেন। হাঁটা পথের দূরত্বে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন। তাই সকলে হেঁটে চললাম। ট্রেনের দেরি ছিল। স্টেশনের বাইরে চা খাওয়া হল। চা খেয়ে স্টেশনে ঢুকতে গিয়ে দেখা রুমবাদার সঙ্গে। যাত্রীদের জন্য অপেক্ষা করছেন। রুমবাদার সঙ্গে একদফা ছবি তোলা হল।

ভিস্তা ডোম থেকে তোলা ছবি।

ট্রেনে উঠে জিনিসপত্র গুছিয়ে রেখে আরেক দফা ছবি পর্ব। পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করতে ভিস্তাডোম ট্রেন চালু করেছে ভারতীয় রেল। তার মধ্যে একটা নিউ জলপাইগুড়ি থেকে আলিপুরদুয়ার পর্যন্ত চলছে। ডুযার্সের জঙ্গলের দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন এই ট্রেনে গেলে। মুখ চালানোর জন্য খাবার বানিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। ছবি তো বনতা হ্যায়। ৭.২০ মিনিটে জলপাইগুড়ি ছাড়ল ট্রেন। আলিপুরদুয়ার পৌঁছব দুপুর ১টা নাগাদ। দূরত্ব ১৬৮ কিলোমিটার হলেও স্টেশনে দাঁড়িয়ে পর্যটক মনোরঞ্জনে অনেক বেশি সময় দেওয়া হয়েছে।

চা বাগান।

শিলিগুড়ি টাউন না থেমে ট্রেন চলতে লাগল শিলিগুড়ি জংশন এর দিকে। তার পর গুলমা পেরিয়ে সেবক। সেবক স্টেশনে ফটোসেশনের সময় এক খুদের দেখা। তার ছবি তুলে দিলাম। কিন্তু তার দাবি সে ছবি তোলাবে না। ছবি তুলবে। আবদার মেটানোর পর দিব্যি আমাদের সঙ্গে ট্রেনের মধ্যে দাপিয়ে বেড়াল। বাবা মাকে যেন চেনেই না। সেবক স্টেশন পার করার পর ট্রেন ছুটতে শুরু করল তিস্তা নদীর উপর দিয়ে। এই ট্রেন রুটেই তিস্তা, তোর্সা আর জলঢাকা, উত্তরবঙ্গের প্রধান তিনটে নদীর দেখা পাওয়া যায়। তিস্তা এখন সরু সুতোর মত বয়ে চলেছে। নিউ মাল জংশন স্টেশন থেকে ডুয়ার্সের জঙ্গলে ঢুকে পড়লাম। সবুজের সমারোহ বাড়ছিল। দু’একটা ময়ূর চোখে পড়ল।

ডুয়ার্স। হাতি বেরোবে?

নিউ মাল জংশনে অনেকক্ষণ ট্রেন দাঁড়াল। প্ল্যাটফর্মে নেমে শুনতে পাচ্ছিলাম দূরে চা বাগান থেকে পাখির আওয়াজ ভেসে আসছে। চা বাগানে চা শ্রমিকরা দলবেঁধে পাতা তুলছেন। সমরেশ মজুমদারের কালজয়ী উপন্যাসের স্বর্গছেঁড়া চা বাগান যেন বইয়ের পাতা থেকে উঠে এসেছে। একটা দল আমাদের কাছাকাছি আসনে ছিলেন। দলটার বিশেষত্ব, সকলে ষাটোর্ধ্ব। এই বয়সে তাঁদের যা উৎসাহ তার অর্ধেক আমাদের ওই বয়সে থাকলে হয়। ওঁরা বললেন, সারা বছর এইভাবেই ঘুরে বেড়ান। অবসর জীবনে এটাই তাঁদের বিলাস। দলের একজনের বিবাহবার্ষিকী। ট্রেনের মধ্যেই কেক কেটে পালন করলেন। জানালেন, কর্তা সফরে আসেননি। বাড়ি পাহারা দিচ্ছেন। শুভেচ্ছা জানালাম।

ষাটোর্ধ্ব তরুণ-তরুণীরা।

পরের স্টেশন চালসা। এই স্টেশনের আশে পাশে হাতির আনাগোনা আছে। দিনের আলোয় না এলেও সন্ধে হলে লাইন পারাপার করে।  প্রায়ই এর পরের স্টেশন ক্যারন, চাপড়ামারি স্টেশনে হাতি আসার খবর হয়। এখানে একটা লেভেল ক্রসিংয়ে হাতিকে দূরে রাখতে মৌমাছির আওয়াজ বাজানো হয়। মৌমাছিকে ভয় পায় হাতিরা। এড়িয়ে চলে। বানারহাট, বিন্নাগুড়ি স্টেশন ছেড়ে গাড়ি এগিয়ে চলেছে। দলগাঁও চলে গেল। দলগাঁও স্টেশনের নামটা আমার কাছে পরিচিত। এখানে ডলোমাইট মালগাড়িতে বোঝাই করে বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হয়।

হাতি করিডর।

ইতিমধ্যে আমাদের আলোচনা চলছিল, আলিপুরদুয়ার নেমে আমাদের পরবর্তী কাজ কী হবে। কারণ আলিপুরদুয়ার থেকে ফেরার ট্রেন রাত ১০:৩০ এ। মাঝের ৫-৬ ঘণ্টা সময় কী করা যায়? বক্সা জয়ন্তী যাওয়া যায়। অথবা কোচবিহার রাজবাড়ি। আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হল কোচবিহার রাজবাড়ি যাওয়া হবে। কারণ বক্সা জয়ন্তী ওই কয়েক ঘণ্টার জন্য গেলে উপভোগ করা যাবে না। রাতের ওয়াচ টাওয়ার থেকে জয়ন্তী দেখার মজা অন্যরকম। তাই ওটা হাতে সময় নিয়ে ঘোরা হবে। মাদারিহাট স্টেশনে গাড়ি দাঁড়াতে স্টেশনের বাইরে থেকে খাবার কিনে আনা হল। এখানে গাড়ি বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়াবে। এখানে নেমে জলদাপাড়া অভয়ারণ্য পৌছানো যায়। আদিবাসী গ্রাম টোটোপাড়াও পৌঁছনো সহজ।

রাজাভাতখাওয়ায় ভিস্তা ডোম।

পরবর্তী যে স্টেশনে ট্রেন দাঁড়াল সেটা হাসিমারা। ভারত-ভুটান সীমান্তে হাসিমারা এয়ারবেস যেতে এখানে নামতে হয়। ভুটান প্রবেশ করার প্রবেশপথ ফুন্টশোলিং এখান থেকেই যেতে হবে। কালচিনি স্টেশনে ট্রেন দাঁড়ায়নি। এবার তোর্সা নদী পার করে ট্রেন চলেছে। দেখলে মনে হবে শুকনো মাঠ বোধহয়। বর্ষাকালে এর অন্য রূপ হয়। বর্ষাকাল আর শীতকালের আকালপতাল তফাৎ ময়ূরাক্ষী, অজয়, কোপাইয়ে দেখেছি। ট্রেন দাঁড়াল রাজাভাতখাওয়া স্টেশনে। বক্সা, জয়ন্তী যেতে এই স্টেশনে নামতে হয়। ট্রেনের রান্নাঘরের কর্মী বললেন, ‘‘এখানে হাতি দেখা গেছে কাল। দেখুন যদি দেখতে পান।’’ ঘন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে ট্রেন দুলে দুলে চলছে আর বাইরে তাকিয়ে আছি। কিন্তু জানি এই দিনের আলোয় তারা আসবেই না। দূর থেকে হয়তো আমাদের লক্ষ্য করছে।

মাদারিহাট।

সময় মতো ১টা নাগাদ আমরা নামলাম আলিপুরদুয়ার জংশনে। নেমে একদফা ফটোসেশন হলো। খাওয়াদাওয়া করতে হবে। কোথায় করা যায়? স্টেশনের বাইরে সেরকম কিছু চোখে পড়ল না। বিকাশদা পরামর্শ দিল, স্টেশনের জন আহারেই খাওয়াদাওয়া করা যাক। তখন একজন ডাক দিলেন, ‘‘আসুন আমাদের হোটেলে খেয়ে যান। ভাল খাবার।’’ অনেকক্ষণ থেকেই ওঁরা কয়েকজন স্টেশনের বাইরে অপেক্ষা করছিলেন। ভাবছিলাম গাড়িচালক হয়ত। জন আহারে খাবার জন্য মনস্থির করে সেদিকেই যাচ্ছিলাম। হঠাৎ সেই ভদ্রলোক বললেন, ‘‘আমাদের হোটেলে বোরোলি মাছ পাবেন। ওখানে কিন্তু পাবেন না।’’

নৌকার মতো পাত্রে ইহাই বরোলি।

বক্সা জয়ন্তী ভোটে জিতেও বাতিল হয়েছিল। জন আহারেও তাই হল। গেলাম হোটেল উর্বশীতে। ভাত, ডাল, একটা সবজি, শাক ভাজা, চাটনি আর সঙ্গেথে বোরোলি মাছের চচ্চড়ি। দলের লোকজন মিশ্র প্রতিক্রিয়া দিল। রান্না নিয়ে কারও অভিযোগ ছিল না। কিন্তু বোরোলি বলে যেটা খাওয়ানো হল সেটা সত্যি কি বোরোলি? রথীনদা বলল, ‘‘এ তো পুঁটিমাছ। আমার প্লেটে একটা পাঁকাল মাছ পেলাম।’’

তোর্সা নদী।

খাওয়াদাওয়া মিটতে গাড়ি হাজির। বিকাশদা ভিস্তা ডোমে আসতে আসতে গাড়ি ঠিক করে ফেলেছিল। বড় গাড়ি। ১২ জনের দল আর বাক্স প্যাটরা। তা-ও বেশ আরাম করে হাত পা ছড়িয়ে বসলাম। গাড়ি চলল হাইরোড দিয়ে। চারপাশের দোকানে লেখা দেখে জানলাম এটাকে নিউটাউন বলে। চাদ্দিকে নতুন নতুন শহর গজিয়ে উঠছে। কিছুক্ষণের মধ্যে আলিপুরদুয়ার ছেড়ে কোচবিহার জেলায় ঢুকে পড়লাম। কালজানি নদীর ব্রিজ পেরিয়ে গাড়ি এগিয়ে চলল। এই কালজানি নদী তুফানগঞ্জের কাছে বাংলাকে এপার আর ওপারে ভাগ করেছে। রাজবাড়ির এলাকায় পৌঁচ্ছছি আশপাশের দোকান দেখে মালুম হচ্ছিল। এতক্ষণের মাঠ ঘাট ছেড়ে দোকান বাজার দেখা দিচ্ছিল। রাস্তাতেই বিকাশদা পুরাতত্ব বিভাগের ওয়েবসাইট থেকে অনলাইনে সকলের টিকিট করে নিল। ড্রাইভার দাদা জানিয়ে দিলেন রাজবাড়ির ভিতর ক্যামেরা নিষিদ্ধ। তবে মোবাইলে বাধা নেই।

ভিস্তা থেকে তিস্তা।

রাজবাড়িতে ঢুকে পড়া গেল। রাজবাড়ির সামনে গালিচার মতো ঘাস। দেখে মনে হয় একটু গড়িয়ে নিই। নীচের তলায় দেওয়ালে কোচ রাজাদের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস এবং রাজপুরুষদের ছবি ও পরিচয়। দ্বিতীয় তলে সেই আমলে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি, পোশাকআশাক এবং অস্ত্রশস্ত্রের সংগ্রহশালা। সে সব দেখে বারান্দায় দাঁড়িয়ে বাইরের দৃশ্য দেখতে বেশ লাগছিল। রাজবাড়ির মিনারে অনেক টিয়াপাখির বাস। তারা দেখি মনের আনন্দে চেঁচামেচি লাগিয়েছে। রাজবাড়ির পাশে একটা বেশ বড়ো জলাশয়। এটাকে সাগর দিঘি বলে।

কালজানি নদী।

বেলা পড়ে আসছিল। এখন মদনমোহন মন্দির দেখা বাকি। বাইরে এসে অবাক। রাজবাড়ি দেখার জন্য রীতিমতো লাইন পড়েছে। ভিতরে যাওয়ার সময় এত ভিড় দেখিনি। যাই হোক গাড়িতে চেপে বসলাম। সাগরদিঘির পাশ দিয়ে গাড়ি এগিয়ে চলল। মদনমোহন মন্দিরের ভিতর বেশ ভিড়। মন্দির চত্বরে মেলা বসেছে । রাস উপলক্ষে মেলা। এটা নাকি রাস উপলক্ষে সবচেয়ে বড় মেলা। আলোচনা করে ঠিক হল, আগে মন্দিরে ঢুকে একটু সময় কাটিয়ে তারপর মেলা ঘোরা হবে। মেলা আর কতক্ষণ ঘুরব। বেশিক্ষণ মন্দিরে বসব। মন্দিরের ভিতরে প্রসাদ বিতরণ হচ্ছে দেখলাম। লাইন দিয়ে খাওয়া হল। একটা জিনিস দেখলাম সবাই গিয়ে ঘুরিয়ে দিয়ে আসছে। ওটা রাসচক্র। গায়ে নানা রকম দেব দেবীর ছবি আঁকা। ওটা নিয়ে পরে কাগজে প্রতিবেদন পড়লাম। জানলাম রাসচক্র বংশানুক্রমে একজন মুসলমান পরিবার তৈরি করে থাকেন।

কোচবিহার রাজবাড়ি।

সন্ধে নামার মুখে মেলার দিকে পা বাড়ালাম। কাঠের আসবাব থেকে শুরু করে প্লাস্টিকের খেলনা, আবার কাপ প্লেট থেকে কার্পেট রকমারি সম্ভারে মেলা জমজমাট। ঘুরতে ঘুরতে সকলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছি। কিছুক্ষণের মধ্যে আবিষ্কার করলাম মেলা আক্ষরিক অর্থেই বড়। এতটাই বড় আজকে বোধহয় ঘুরে শেষ করে উঠতে পারব না। তাই আর বেশি দূর না এগিয়ে একই জায়গায় ঘুরে দেখতে লাগলাম। পিঠেপুলির স্টল দেখলাম। পাটিসাপটা, মালপোয়া তৈরি হচ্ছে। খেলাম। আর ভাপা পিঠে তৈরি হচ্ছিল। মুখ সরু কলসিতে জল গরম হচ্ছে। তাতে ভাপিয়ে পিঠে তৈরি হচ্ছিল। কিন্তু ভিড়ের মধ্যে ছবি তুলতে পারিনি। সকলে টুকটাক কেনাকাটা করতে করতে সময় হয়ে এল। মেলা ছেড়ে বেরিয়ে এসে আমরা গাড়িতে উঠলাম। গাড়ি নামিয়ে দিল আলিপুরদুয়ার স্টেশনে। এবার আর ভুল করিনি। স্টেশনের ভোজনালয়ে রাতের খাবার খেয়ে ট্রেনে উঠলাম। কর্মভূমি এক্সপ্রেস। চারদিনের সফর শেষ। এবার যে যার বাসায়।

রাজবাড়ির অস্ত্রশস্ত্র।

সকালে ট্রেন মালদায় ঢুকছে। রথীনদা মালদায় আমাদের এক সহকর্মীকে ফোন করল। তার পর ট্রেন থেকে নেমে গেল। বেশ কিছুক্ষণ ট্রেন দাঁড়াবে। আমাদের চেনা বৃত্তে এসে পড়েছি। ট্রেন ছাড়বার মুখে রথীনদা উঠে এল ট্রেনে। হাতে বেশ বড় প্যাকেট। খুলে দেখি মালদায় আমাদের রানিং রুমের পাশে তৈরি হওয়া মকাইয়ের রুটি। খেতে খেতে রামপুরহাট এসে গেল। আমরা নেমে পড়লাম। বাকিরা চলল বর্ধমান।

কভারের ছবি— ভিস্তা ডোম থেকে

ছবি- রথীন সেন, বিকাশ সরকার ও লেখক

(সমাপ্ত)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *