ধাপধাড়া গোবিন্দুপুর।
অন্য সফর বিশেষ ভ্রমণ

ধাপধাড়া গোবিন্দপুরের খোঁজ?

দীপক দাস

ধ্যাদধেড়ে বা ধাপধাড়া। সঙ্গে গোবিন্দপুর। এমন মানিকজোড় গ্রামটি কোথায়? একটু দূরে বাড়ি, শ্বশুরবাড়ি, নেমন্তন্ন বাড়ি হলেই যে মানিকজোড় গাঁওয়ের নাম লোকে স্মরণ করে! হাসির গল্পে মজার দৃশ্যের অবতারণা হয়? জানা নেই। কথার কথাই ভাবতাম।

ভুল ভাঙল এক সফরে বেরিয়ে। দীপ্তেন্দুবিকাশ জানা আমাদের নিয়ে যাচ্ছিল শুঁড়ে কালনা। বিখ্যাত অম্বিকা কালনার সঙ্গে এ কালনাকে মেশালে চলবে না। সঙ্গী মিস্টার ঘাসপুস দীপু আর ছোটা ডন বাবলা। সাঁকোটাকো পার করে একটা বাঁধের রাস্তা ধরে আমাদের বাইক ছুটছিল। একটা যানকে অবশ্য বাইক বলা যায় না। স্কুটি। বাবলা চালাচ্ছিল। সওয়ারি আমি।

হুগলি পার করে যেতে যেতে হঠাৎ দেখি, আমরা পূর্ব বর্ধমানে ঢুকে পড়েছি। আবার বাইকে তিন জেলা সফর। তার পরেই একটা দোকানের সাইনবোর্ডে দেখতে পেলাম, ধাপধাড়া লেখা। চেঁচামেচি, গাড়ির হর্ন দিয়ে উড়ন্ত দীপুকে থামানো হল। উত্তেজিত ভাবে দেখালাম সাইনবোর্ডটা। দীপ্তেন্দু প্রথমে সাইনবোর্ডের মনসা আর মহাপ্রভুকে নিয়ে পড়েছিল। ওর মন্দির, ধর্ম ইত্যাদির ইতিহাসে ঝোঁক আছে। আমি আমার আবিষ্কারে গুরুত্ব দিতে বললাম। ওরাও দেখে অবাক। সত্যি ধাপধাড়া নামে কোনও গ্রাম আছে! দীপ্তেন্দু বলল, ‘‘ধাপধাড়া যখন আছে তখন আশপাশে গোবিন্দপুরও আছে।’’

ধাপধাড়ায় মনসা ও মহাপ্রভু একাসনে।

সত্যি ছিল। ধাপধাড়া লেখা দোকান পেরিয়ে কিছুটা গিয়ে আমরা বাঁধের রাস্তা ছেড়ে নীচের দিকে গড়িয়ে গেলাম। নামছি। এবার দীপ্তেন্দু উত্তেজিত, ‘‘এই দেখো গোবিন্দপুর।’’ লেখা একটা দোকানের সাইনবোর্ডেই। ঠিক গোবিন্দপুর নয়, হরগোবিন্দপুর। তাতে কী! লোকজন যা সাঁটে কথাবার্তা বলে তাতে পুরো নামটা নিশ্চয় উচ্চারণ করে না। এই তো আমাদের দলেই উদাহরণ, দীপশেখরের মতো সুন্দর নামটা দীপুতে গিয়ে ঠেকেছে। দীপ্তেন্দুবিকাশও নিশ্চয় পরিচিতদের কাছে দীপু!

ধাপধাড়ার খোঁজ পেয়ে আমরা চার কলম্বাস বা ম্যাগেলান তো খুব খুশি! বাঁধের অবস্থা থেকে নামকরণের একটা সার্থকতা বোঝার চেষ্টা করছিলাম। ভয়াবহ। আমাদের পক্ষে বা এলাকার বাসিন্দাদের পক্ষেও নয়। এলাকাবাসীর কথা ভেবে একটু কষ্টই হল। ধাপধাড়া বা ধ্যাদধেড়ে যে অর্থে বলা হয় তা সার্থক। হাজারো ইটের খোয়াইশ নিয়ে বেঁচে রয়েছে রাস্তা। ঠিক খোয়াইশ নয়, স্মৃতি। বহু ইটের স্মৃতি বাঁধটি ধরে রেখেছিল। কিন্তু সুখস্মৃতি নয় সে সব। এই এলাকার লোকজন জেলার বাইরে গ্রামের নাম বলেন! বললেও বিশ্বাসযোগ্য হয়! লোকে ভাবে না তো যে মজা করছে? আরেকটি প্রশ্ন, এটাই কি সেই ধাপধাড়া গ্রাম? যার নাম নিয়ে এত অবজ্ঞা? এলাকাবাসীকে এ সব জিজ্ঞসা করলে মার খাওয়ার সম্ভাবনা। তা ছাড়া দেখতে পাইনি কাউকে। খোঁজার সময়ও ছিল না।

হরগোবিন্দপুর। ধাপধাড়ার কাছের এই গ্রামটিই বোধহয় লোকমুখে গোবিন্দপুর হয়েছে।

ধাপধাড়া শব্দটি অবজ্ঞাসূচক হয়ে গিয়েছে। কিন্তু গ্রামের একটা গুণ চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিল দীপ্তেন্দু। এই গ্রাম পেরেছে মনসা এবং মহাপ্রভুকে একাসনে বসাতে। দু’জনের কাছেই কৃপাপ্রার্থী সাইনবোর্ড টাঙানো দোকানটির মালিক।

ভারতের মাটি সমন্বয়ের মাটি। ধাপধাড়া গোবিন্দুপুরেও তা সত্য!

ছবি— লেখক

(সমাপ্ত)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *