যথা ইচ্ছা তথা যা
নানা পাখি দেখা গিয়েছে হাওড়ার বিভিন্ন গ্রামের এদিক সেদিকে। ছবি তোলা হয়েছে টুকটাক। কিন্তু সেসব সাজানো হয়নি। এই সময়ে প্রকৃতি আর মিষ্টি মগ্ন হয়ে পড়েছিলাম আমরা, যথা ইচ্ছা তথা যা’ পরিবারের সদস্যরা। জীবজগতের দিকে তাকানো হয়নি তেমন। আজ আবার হাজির আমরা প্রকৃতির সুন্দর কিছু উপহার নিয়ে।
১। ছোট বসন্তবৌরি
দুপুরে হঠাৎ চোখে পড়েছিল আমগাছের শুকনো ডালে। উঠোনেই গাছটা। শুকনো ডালটায় একটা ছোট্ট পাখি গর্ত করার চেষ্টা করছে। অপূর্ব তার রূপ। মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিলাম। হঠাৎ মনে হল, এই দৃশ্য ধরে রাখা দরকার। বড় বসন্তবৌরি নিয়মিত জল খেতে আসে বাগানে। কিন্তু ছোট বসন্তবৌরিকে বেশি দেখিনি। পাতিহালে তোলা।
বাসা তৈরিতে ব্যস্ত ছোট বসন্তবৌরি।
২। খয়রা কাস্তেচরা
বড়গাছিয়ায় যাতায়াতের পথে নজরে পড়ছিল পাখির ঝাঁকটাকে। দূরে ধান জমিতে কী যেন খোঁজে। এতটাই দূরে যে মোবাইলে তেমন সুবিধে হবে না। কিন্তু বারবার ক্যামেরাটা নিয়ে যেতে ভুলে যাই। একবার বাড়ি ফিরে আবার বেরিয়েছিলাম ক্যামেরা নিয়ে। বন্দি হয়েছিল পাখির ঝাঁকের ছবি। কিছুদিন পরে দেখি, আমাদের বাড়ির সামনের মাঠে হাজির এক ঝাঁক। পুরনো ডিজিটাল ক্যামেরায় যতটা সম্ভব ছবি তোলা হল। পাখিগুলোকে কাস্তেচরা বলে মনে হচ্ছিল। কিন্তু এর তো অনেক ভাগ। শরণাপন্ন হওয়া গেল ঝাড়গ্রামের বিশ্বরূপ মণ্ডলের। তিনি জানালেন, এটি গ্লসি আইবিস বা খয়রা কাস্তেচরা। পাতিহালে আগে কখনও দেখিনি।
কাস্তেচরার এই ঝাঁক দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম।
৩। চাতক কাহিনি
একটা বড়সড় চাতক দেখেছিলাম বাড়ির বাগানেই। কিন্তু ছবি তুলতে পারিনি। সেদিন বাড়িতে দীপু ছিল। ও আশ্বাস দিয়েছিল, দেখা যখন গিয়েছে তখন আছে। কিছুদিন পরে আবার দেখেছিলাম পাখিটাকে। সেবারও ফ্রেমবন্দি করা যায়নি। একদিন লক্ষ করলাম, বাগানে জল দেওয়ার মাটির পাত্রের কাছে একটা চাতকের মতো পাখি বসে রয়েছে। ডানাগুলো লোটানো। অসুস্থ নাকি! সেদিনও ফস্কেছিল ক্যামেরার লেন্স। দু’একদিনের মধ্যে আবার দেখলাম পাখিটাকে। আর আশ্চর্য হয়ে গেলাম। একটা ছাতারে পাখি ওই পাখিটাকে খাইয়ে দিচ্ছে। আসলে পাখিটা বাচ্চা। ছাতারের বাসায় ডিম পেড়েছিল মা চাতক! কী জানি! তবে বাড়ির বাগানে চাতক পেয়ে খুশিই হয়েছিলাম।
ছাতারের সঙ্গে বাচ্চা চাতক।
৪। পোকা না মাকড়
আমগাছে একসঙ্গে অনেকগুলো জড়ো হয়েছিল। বড়সড় বিদঘুটে দেখতে পোকাগুলো। কী পোকা জানি না। পুরো মিশেছিল গাছের কাণ্ডের একটা ক্ষতের মধ্যে।
কী পোকা রে বাবা!
৫। সুন্দর প্রজাপতি
প্রজাপতির কী নাম সেটা সৌরভ দুয়ারী স্যারের বই দেখলেই বোঝা যাবে। কিন্তু বইটা হাতের কাছে খুঁজে পেলাম না। বড় সুন্দর দেখতে প্রজাপতিটাকে।
সুন্দর দেখতে প্রজাপতিটাকে।
৬। এটা মাকড়
নিশ্চয় মাকড়সার কোনও এক প্রজাতি। বাড়ির ফুল গাছে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। বড়সড় আর অন্যরকম বলে চোখে পড়েছিল। কাজ ছিল না। তাই ছবি তুলে রেখেছিলাম।
পাকড়াশিদের কাঁকড়া ডোবায় এই মাকড়সারাই বোধহয় হরতাল করে।
৭। টিয়েটা
বাড়ির কামরাঙা গাছটি বোধহয় ওদেরই উৎসর্গ করা হয়েছে। কী করে খবর পায় কে জানে! দল বেঁধে ঠিক হাজির হয় প্রতি বছর। ফলগুলো ঘুনকুচি করে ফেলে রাখে গাছের নীচে। একটা দেখি, একদিন জল খাচ্ছে।
টিয়া পাখি সবসময়ই সুন্দর লাগে।
৮। হটিটি
এখন বহু হটিটি পাখি দেখা যায় পাতিহালে। নানা রকমের। ইংরেজিতে সবগুলোই কি ল্যাপউইং? কে জানে? জোড়াটাকে দেখেছিলাম ধান জমিতে।
হটিটি বেশ বাহারি পাখি।
৯। এ কি বক!
বড্ড লম্বা গলা ছিল বকটার। দেখার মতো। ধান জমিতে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে অনেক দূর পর্যন্ত গলা বাড়িয়ে পোকা খাচ্ছিল। বেশ লাগছিল দেখতে। পাখিপ্রেমিক সৌম্য চট্টোপাধ্যায় জানালেন, এটি ইন্টারমিডিয়েট ইগ্রেট বা মাঝারি বক।
ওই বক ধর ধর…এখন লিখলে কারাবাস।
১০। কণ্ঠি ঘুঘু
প্রথম দেখেছিলাম পাতিহাল স্টেশনে। সকালের প্ল্যাটফর্মের শেডে কোথা থেকে উড়ে এসে বসেছিল। ছবি তোলা হয়েছিল। কিন্তু সে ছবি আর পরে খুঁজে পাওয়া যায়নি। একবার সাঁতরাগাছি স্টেশনে বসেছিলাম। ট্রেন আসতে দেরি ছিল। একটা ঘুঘু একদম কাছে এসে বসেছিল।
ঘুঘু কুলতিলক কণ্ঠি ঘুঘু।
১১। কী পাখি!
ছোট্ট পাখিটা ঘাসজমিতে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। নাম জানি না। তুলে রাখা হয়েছিল ছবি। অভিজ্ঞ কেউ নিশ্চয় চিনিয়ে দেবেন। এবং চিনিয়ে দিয়েছেন। লেখা পোস্ট হওয়ার পরে পাখিপ্রেমিক সৌম্য চট্টোপাধ্যায় জানালেন, এটি প্যাডিফিল্ড পিপিট বা মাঠচড়াই।
নাম না জানা পাখি।
হাওড়ায় নানা রকম পাখি দেখা যাচ্ছে, এই খবরে বেশ স্বস্তি মিলছে। বেশ কিছু জলাশয়ে কিছু পরিযায়ী স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে গিয়েছে, এটাও দেখেছি আমরা। পাতিহালে কিছু পাখির সংখ্যা বোধহয় বেড়েছে। রামগাংরা দেখা যাচ্ছে একাধিক। মুনিয়া, হটিটি, কমলাদামাও একাধিকবার দেখা গিয়েছে। চাতক প্রাপ্তি তো সবচেয়ে সুখের।
(কণ্ঠী ঘুঘু ছাড়া বাকি সব ছবি পাতিহালে তোলা। সবই দীপক দাসের অভিজ্ঞতা)।
কভারের ছবি— খয়রা কাস্তেচরা
(সমাপ্ত)