ডঃ শ্রাবনী চ্যাটার্জি

বাঙালিদের প্রাণের আরাম, মনের আনন্দ কিসে? ভাল-মন্দ আহারে, আর যত্রতত্র বিহারে। আবার মজার বিষয় হল, এই আহার আর বিহার একজন আরেক জনের সঙ্গে হাত ধরাধরি করে চলে। বিউলির ডাল, আলুপোস্ত, মাছের ঝোলে অভ্যস্ত বাঙালি এ মুলুক সে মুলুক গেলে সেখানকার খাবারেরও সুলুকসন্ধান করতে ছাড়ে না। আমিও তেমনই এক পেটুক নাচুনে বাঙালি যার জিভে হরেক স্বাদের টাকরা আর পায়ের নিচে সর্ষে। তেমনই কয়েকখানা বিহারকালীন আহারের গল্প বলতে বসেছি। আজকে শুরু হোক আপ্যায়ন পর্ব দিয়ে। খাবার শুরুর আগের অম্লমধুর শরবত।
গণেশপুজোর পরের এক সন্ধ্যে। গিয়েছি মুম্বই, পতি-সকাশে। তা মনে হল যাই একবার সিদ্ধিবিনায়কের চরণে মাথাটা ঠুকেই আসি, থুড়ি নারকেল ঠুকে আসি। তা গেলাম। ফেরার সময় প্রথমে ঝিরিঝিরি তার পর ঝরঝরে বৃষ্টি। তার মধ্যে গণপতির বিসর্জন। মন্দির থেকে বেরিয়েছে দাদর অবধি হেঁটে আসা ছাড়া গতি নেই। এ দিকে একখানি ছাতায় দু:জন স্থূলবপুর ঠাসাঠাসি। নার্গিস-রাজ সেজে রোমান্স করার থেকে সর্দি লাগার ভয় বেশি।

এই সেই রেস্তরাঁ।
অগত্যা আধভেজা ঢুকে পড়লাম রাস্তার পাশে একটা ছোট্ট রেস্টুরেন্ট এ। নাম ‘মালাবার’। সময় কাটানোর উদ্দেশ্যে টুকিটাকি চেখে দেখার জন্যই অর্ডার দেওয়া হল সোলকড়ি আর পটেটো গানপাউডার ফ্রাই। কিছুক্ষণের মধ্যে কাচের গ্লাসে নরম গোলাপি রঙের পানীয় হাজির। চোখের আরামের পর প্রথমে চুমুক। সেই সূচনা। মুখের ভিতর দিয়া উদরে পশিলো গো, আকুল করিল মোর প্রাণ। নারকেল দুধের সঙ্গে কোকম-এর ছাল যাকে এরা ‘আগল’ বলে মিশিয়ে তৈরি পানীয়, তাতে হালকা মশলার সুবাস। হালকা টক-ঝাল-নোনতায় মেশা স্বর্গীয় আস্বাদ।

রসনা তৃপ্তির সোলকড়ি (বাঁ দিকের ছবি)।
আমি খাঁটি বাঙালি। পৃথিবীতে আমপোড়া আর বেলের শরবতের থেকে ভাল কিছু থাকতে পারে মানতেই চাই না। কিন্তু সমুদ্রবেষ্টিত কোঙ্কণের বেলাভূমির এই নিজস্ব পানীয় তার রূপ-রস সব কিছু দিয়ে আমার রসনা জয় করে নিয়েছে। আরেকটা কথা! এই গোলাপি সুন্দরী শুধু জিহ্বার আরাম নন, উদরেরও আরাম। ভারী খাবার খেয়ে বা খাবার আগে এক গ্লাস তারিয়ে তারিয়ে খান। গ্যাস-অম্বল আরব সাগর পেরিয়ে দ্বীপান্তরে চলে যাবে।
ভবিষ্যতে দাক্ষিণাত্য ভ্রমণে গেলে একবার সোলকড়ির স্বাদ নিন। ধন্যবাদটা ফিরে এসে দেবেন।
ছবি— লেখিকা
(সমাপ্ত)