ডক্টর শ্রাবনী চ্যাটার্জি

‘সাহেবরা সব চলে গেছে, স্বাধীন করে দেশটাকে
আমরা ওদের ছাড়িনি তো, ধরে আছি তবু ল্যাজটাকে’।
উত্তমকুমারের ‘ওগো বধূ সুন্দরী’ সিনেমার সেই দৃশ্যটা মনে আছে? সঙ্গে এই মানানসই গান, ‘এই তো জীবন’! তা গানে মহানায়ক ‘কলোনিয়াল হ্যাংওভার’কে যতই শ্লেষ বিদ্ধ করুন কিছু মানুষ কিন্তু এখনও ইংরেজদের ঐতিহ্য নিয়ে বেশ গর্ব বোধ করেন। আমার কর্তাই সেই দলে পড়ে। মানালি বেড়াতে গেলে সেই রকম মানুষদের অবশ্য-দ্রষ্টব্য ক্লাবহাউস। হিমালয়ের কোলে পাহাড়ি গাছের সারি, পাশ দিয়ে তির তির করে বয়ে চলা চঞ্চলা কিশোরীর মতো সুন্দরী বিপাশা নদী। দূরে সীমান্তের পটরেখায় উত্তঙ্গ হিমশুভ্র পর্বতশৃঙ্গ। সব মিলিয়ে এই শৈলশহর পর্যটকদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে। আর তার সঙ্গে রয়েছে কিছু স্থানীয় সুখাদ্য যার মধ্যে উপলবন্ধুর পাহাড়ি নদীর ট্রাউট মাছের খ্যাতি জগৎ জোড়া।

খেতে ব্যস্ত দুই মূর্তিমান।
মানালি ছাড়াও হিমালয়ের অন্য প্রান্তে, যেমন কাশ্মীরেই পহালগামে লিদার নদীতে ভাল ট্রাউট পাওয়া যায়। তবে এখন মানালির আশেপাশে অনেক জায়গায় ট্রাউট ফার্ম গড়ে ওঠায় মাছটি এই অঞ্চলে বেশ সুলভ। মানালির ম্যালে প্রচুর রেস্তরাঁ রয়েছে যেখানে এই মিষ্টি জলের অতি সুস্বাদু মাছটির নানারকম পদ পাওয়া যায়। তবে যদি একদম খাঁটি গ্রিলড ট্রাউট খেতে হয় তবে ক্লাব হাউসে খাওয়াই সব থেকে ভাল। এমনিতে এই ক্লাব হাউস মানালির জনপ্রিয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম। ম্যাল রোড থেকে কিলোমিটার খানেক দূরত্বে স্বচ্ছতোয়া বিপাশার পাশেই রয়েছে এই ক্লাব।

সাজসজ্জায় টেবিলে হাজির গ্রিলড ট্রাউট।
হিমাচল প্রদেশ টুরিস্ট ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন পরিচালিত জায়গাটি। এই জায়গায় রয়েছে স্থানীয় হস্তশিল্পের সম্ভার আর নানারকম খেলাধুলোর ব্যবস্থা। তারই মধ্যে ব্রিটিশ শৈলীর রেস্তরাঁয় ইউরোপীয় কায়দায় আস্ত ট্রাউট মাছ সঙ্গে ‘সটেড ভেজিটেবলস’ মানে অল্প তেলে নেড়ে সবজি সঙ্গে মেয়নিজ দিয়ে পরিবেশন করা হয়। মোটামুটি সল্পাহারী ব্যক্তির পেট ভরা খাবার। সঙ্গে ইচ্ছে করলে অন্য পদ দিয়েও পেট ভরিয়ে নেওয়া যায় অবশ্য। নরম মাছ মুখের মধ্যে গেলেই মিলিয়ে যাবে আর মন বলবে, আহারে, বাহারে স্বাদ!
ছবি- লেখিকা
(সমাপ্ত)