দীপক দাস সন্ধেবেলায় পাহাড়ে ঢোকার মোড়টা একটু জমজমাট হয়। ঠেলা গাড়িতে করে নানা খাবারের পসরা। টুকিটাকি এটাওটা। আমরা আটকে গেলুম খাবারের ঠেলাতেই। চিংড়ির চপ বিক্রি হচ্ছিল। চপের এক প্রান্ত দিয়ে বেরিয়ে রয়েছে চিংড়ির লেজটা। লেজেই মালুম দেহটা বেশ নধর হবে। ইন্দ্র অনেকক্ষণ থেকেই ‘একটা টেস্ট করবে নাকি’ বলে ঘ্যানঘ্যান করছিল। কেনা হল। খাওয়া হল। কিন্তু […]
জঙ্গল যাপন
বনরূপসি বাংরিপোষি—শেষ পর্ব
সৌমিত্র বুধুয়া, প্রফুল্লকানন, মহেশ্বর মৌতাত এবং রানা-ঘাট হোটেল বাংরিপোষির একটি ঘরে পিঁপড়ের সাংঘাতিক উৎপাত। সঙ্গে ছোট ছোট মাকড়সা। আমার এক বন্ধুর তো প্রায় ঘুম ছুটে গিয়েছিল। জানালার পরদায়, বিছানার চাদরে-বালিশে, ব্যাগ-পত্তরে দলে দলে পিঁপড়ের নীরব ‘হোক কলরব’। কলকাতায় হোটেলের কর্তৃপক্ষকে ফোন-টোন করে কোনওক্রমে অবস্থা সামাল দিতে হয়েছিল। বাংরিপোষিতে আমাদের তাই শুধু প্রকৃতি দেখাই হল না, […]
বনরূপসি বাংরিপোষি—দ্বিতীয় পর্ব
সৌমিত্র মেঘ-পাহাড় থেকে হাঁড়িয়া ও হাট কিন্তু জ্যোৎস্নার কনসার্ট থেকে তো বেরতেই হবে! কেন না, পরের সকালেই যে রৌদ্রের হলুদ মাংস কেটে কেটে চলবে সারাদিনের ধারাল সফর-ছুরি। অতএব, ঘাসের চত্বর ছেড়ে দ্রুত রাতের বিছানা। অগস্টের রাতও দেখলাম বেশ ঠান্ডা-ঠান্ডা। পাখা চললেও চাদর লাগল। মশার উৎপাত অসহ্য নয় (তবে, পিঁপড়ের দৌরাত্ম্য আমাদের কাহিল করে দিয়েছিল গোটা […]
বনরূপসি বাংরিপোষি— প্রথম পর্ব
সৌমিত্র রৌদ্র থেকে বর্ষাজ্যোৎস্নায় বর্ষামণ্ডলের ছায়াসমুজ্জ্বল আকাশ মাথায় নিয়েই তো যাওয়া! তিনশোর ভাঙাচোরা কল্লোলিনীর সার্পেন্টাইন গলি থেকে বেরিয়ে একেবারে হাজার-লক্ষ–কোটি বছরের পুরনো অবারিত দিগন্তের মুখোমুখি! ভরা শ্রাবণের দিনরাত্রি-দুপুর-গোধূলিমাখা পাহাড়, বন-বনান্ত, নদী! এবং রাজপথ তো অবশ্যই। সুদূর নিবিড় সড়ক। নিশ্চয়ই খুব বেশিদিনের পুরনো নয়। কিন্তু তার স্পন্দনও যেন বড় অচেনা, বড় মন-কাড়া, বড় মায়া-জড়ানো। কালো পিচরাস্তা […]
শম্ভু আর তিন বন্দিনী প্রেমিকার গল্প— তৃতীয় পর্ব
দীপক দাস বিভুঁইয়ের কত তুচ্ছ জিনিস যে ভাল লেগে যায়! গেঁথে যায় মনে। বেগুনকোদর স্টেশনে একটা লোক মাথায় হাত দিয়ে বসেছিল। অযোধ্যা যাওয়ার পথে দেখেছিলাম, কতকগুলো বাচ্চা একটা চাপাকল ঘিরে খেলছে। কিংবা ভাঙা ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে এক আদিবাসী বধূর দাঁত মাজা! চাতাল যাওয়ার পথে ভাল লেগে গেল দুই মহিলাকে। একপাল ছাগল নিয়ে জঙ্গলের পথে হেঁটে […]
শম্ভু আর তিন বন্দিনী প্রেমিকার গল্প— দ্বিতীয় পর্ব
দীপক দাস ঝেঁপে বৃষ্টি হওয়ায় পরিবেশ ঠান্ডা। বেশ শীত শীত ভাব। তার ওপরে পাখা চলছে! একটা বিষয় খেয়াল করে দেখেছি, এই জগৎ সংসারে যারা সমৃদ্ধ তাদের কথাই চলে। সেই সমৃদ্ধি যে কোনও দিকেই হতে পারে। এই যেমন আমাদের ইন্দ্র। প্রকৃতি ওর শরীরে অতিরিক্ত চর্বির দু’চারটে পরত বিছিয়ে দিয়েছে। ঠিক প্রকৃতির কিনা জানি না। তবে দিনে […]
শম্ভু আর তিন বন্দিনী প্রেমিকার গল্প
দীপক দাস লোকটা পেনসিলে নাম-ধাম টুকছে কেন! রাতে কোনও বড় অফিসারের হঠাৎ উদয় হলে ইরেজার দিয়ে ঘষে প্রমাণ লোপাট! তারপর তল্পিতল্পা বাইরে ছুড়ে ফেলে আমাদেরও কিক অন দ্য ব্যাকসাইড অ্যান্ড ওয়াচ টাওয়ার থেকে আউট! কিন্তু কিছুক্ষণ আগেই তো খাতাপত্র ঘেঁটে আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে, ওয়াচ টাওয়ারের কোনও বুকিং নেই, আজ-কাল।… স্থান-জয়পুর, উপস্থান- বন বিভাগের অফিস। […]
মৌবনে আজ চাঁদ জমেছে
সৌমিত্র সেন বনজোৎস্না এবং মহুয়া গন্ধে আবিল সন্ধ্যারাত্রিগুলি হৃদয়মনের পরতে পরতে জড়িয়ে যাচ্ছে, তবুও নেশাগ্রস্ত অপরাধীর মতো আপনাকে হাঁটতে হচ্ছে এই বাঙ্ময় শালবীথির পথে, কেননা দিনের আলো কুশলতায় দেখা দূরবর্তী উচ্চাবচ টিলাগুলির প্রতিটি উত্তল-অবতল, প্রতিটি শরীরসন্ধি এই আঁধার মেহফিলেও আপনার কাছে সমান মোহময়ী হয়ে রয়েছে, পৃথিবী যে কত আদিম ও সে আদিমতার গন্ধ যে কতদূর […]
হে শালবন, আপনাকে নমস্কার
সৌমিত্র সেন এই প্রথম! হ্যাঁ, জীবনে এই প্রথম ডিসেম্বরের নিঝুম ঠান্ডায় এবং ততোধিক নির্জন অন্ধকারে পাহাড়তলির এক গাঁয়ের উঠোনে গাছের দিকে চেয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছি, মুরগি-প্রত্যাশী! মুরগি নাকি গাছে বসে আছে! আঁধার আরও গাঢ় হবে, তাকে নামানো হবে, দামাদামি হবে, কেনা হবে এবং শেষমেশ বাংলোযাত্রা। হ্যাঁ, এমনটা এই প্রথমই। কোনও ভুল নেই এতে। এতদিন ধরে মুরগি কিনতে […]
ভালকির জঙ্গলে পাঁচমুড়ো
দীপক দাস সমস্যাটা শুরু হয় শুরুতেই। টিকিট কাটা থেকে। আর সেই সমস্যার মূলে আমাদের ইন্দ্রকুমার। ইন্দ্র একাই ‘যথা ইচ্ছা তথা যা’ গ্রুপের প্রথম ভ্রমণের সদস্য সংখ্যা অর্ধেক করে দিয়েছিল। সেবার বাঁকুড়া যাওয়া হবে। দুর্গাপুজোর ষষ্ঠী থেকে অষ্টমী পর্যন্ত। পুজোর সময় তো। অনেকেরই পিছুটান থাকে। দীপু, শুভ সেসব কাটিয়েই সম্মতি দিয়েছিল। ইন্দ্র খুশি মনে টিকিট কাটল। […]